হাসপাতালে ৩১ জন ডায়রিয়া রোগী
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যার হাসপাতালে ৩১ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি থাকলেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানেন না। তিনি বলছেন কোন রোগী নেই, রোগের কোন প্রকপ নেই। সব স্বাভাবিক রয়েছে।
রোগে আক্রান্ত রোগীর হাসপাতালে আলাদা কোন শয্যার ব্যবস্থা নেই। রোগীদের অভিযোগ স্যালাইন ছাড়া সব ওষুধ ফার্মেসী থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি ও বহির্বিভাগে গত দুই সপ্তাহে ৪ শতাধিক ডায়রিয়া রোগে আক্রান্তকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গত তিন দিনে ৩১ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছেই চলেছে। ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত অনেকেই কমিউনিটি ক্লিনিক, স্থানীয় ক্লিনিক ও পল্লী চিকিৎসকের মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে।
শনিবার (১৬ এপ্রিল ২০২২) সরেজমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ৫০ শয্যার হাসপাতালে ৩১ জন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন।
ভর্তিকৃত কয়েকজন হলো, বিলমাড়িয়ার শামিম উদ্দিনের মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া (১ বছর), লালপুর পালপাড়ার দশারত পালের মেয়ে গৌরী (৭ বছর), মাঝগ্রামের রাকিবুলের মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া (দেড় বছর), আড়বাবের কৃষ্ণরামপুরের শরিফুলের ছেলে চাঁদ (১ বছর), রামকৃষ্ণপুরের তুহিনের মেয়ে ফাতেমা (আড়াই বছর), চকজোদৈবকির সাহাবুলের মেয়ে কেয়া (১৩), উত্তরলালপুরের নাছিরের মেয়ে শারমিন আক্তার (১৪), কদিমচিলানের সুজনের ছেলে সাজিদ হাসান (২), অর্জুনপুরের মুরাদের মেয়ে মাওয়া (দেড় বছর), কাজীপাড়া গ্রামের ফরিদের মেয়ে সুইটি (১৮), জয়কৃষ্ণপুরের শাহাবুদ্দিনের মেয়ে লাভলী (২৮), বিদিরপুরের পলানের মেয়ে মাইশা (৯ মাস), পাইকপাড়ার আমিরুলের ছেলে আশিক (১৮), বিলমাড়ীয়ার রায়হানের মেয়ে উম্মে হানি (১০ মাস), দক্ষিণলালপুরের আমিরুলের ছেলে আয়াত (৯ মাস), ঈশ্বরপাড়ার রফিকুলের ছেলে সোহরাব হোসেন (১৯), উত্তরলালপুরের রাসেলের ছেলে রাফসান (৫ মাস)।
চিকিৎসাধীন জান্নাতুল মাওয়ার মা মাসুমা বেগম (২৫) বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগী ভর্তির পর শুধুমাত্র স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। এন্টিবায়োটিকসহ সকল ধরনের ওষুধ ফার্মেসী থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।
হাসপাতাল গেটের ওষুধ বিক্রেতা জিয়াউর রহমান বলেন, কয়েক দিন ধরে খাবার স্যালাইন ও ডায়রিয়ার ওষুধ বেশি বিক্রি হচ্ছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে মানুষকে বেশি দেখা যাচ্ছে।
পল্লিচিকিৎসক শহিদুল ইসলাম বলেন, দিন-রাতের আবহাওয়ার পরিবর্তন আর গরমে মানুষ ব্যাপকভাবে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামের অনেকেই হাসপাতালে যেতে পারেন না। তাদেরকে স্যালাইন ও ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরা মাজদার রহমান বলেন, তাঁর পরিবারের ডায়রিয়া আক্রান্তরা চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবনে সুস্থ্য হয়েছেন।
বহির্বিভাগের ওআরটি কর্নারের ইনচার্জ মোসা. শাহিদা খাতুন বলেন, রমজানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ২৯০ জন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীকে ওরস্যালাইন প্রদান করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৬ মাস থেকে ৫ বছরের শিশুর সংখ্যা অনেক বেশি।
অন্ত:বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স (ওয়ার্ড ইনচার্জ) মোসা. জেসমিন নাহার বলেন, আক্রান্ত রোগী ভর্তির সাথে সাথে সর্বাত্মক সেবা দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকতা মমতাজুল হাসান শিমুল বলেন, এখানে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য আলাদা কোন বেডের ব্যবস্থা নেই। তাপমাত্রা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে তাঁদের সারিয়ে তোলা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. সুরুজ্জামান শামীম বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরুতে ডায়রিয়ার আক্রান্ত রোগী বেড়ে যায়। আক্রান্তদের অনেকে ঘরোয়া উপায়ে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে বা ফার্মেসী থেকে ওষুধ নিয়ে সুস্থ হচ্ছেন। অবস্থা বেশি খারাপ হলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েও চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গত ১২ এপ্রিল ২০২২ উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ কে এম সাহাব উদ্দিন বলেন, উপজেলায় ডায়রিয়ার কোন প্রাদুর্ভাব নেই। এ পর্যন্ত হাসপাতালে কোন রোগী ভর্তি হয়নি। লালপুরে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি।
সাম্প্রতিক মন্তব্য