২৩ বছর পর এক কাতারে লাভলু-আক্কাছ
নুরুজ্জামান,বাঘা (রাজশাহী)। ।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আ’লীগের রাজনীতিতে ২৩ বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে যে দুই নেতার মধ্যে তাঁরা এবার এক সাথে মনোনয়ন চেয়ে ছিলেন প্রথমে জাতীয়-এরপর উপজেলা নির্বাচনে । শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনে একজন মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি হলেন রাজশাহী জেলা আ’লীগের বর্তমান যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক রাবি ছাত্র নেতা এড: লায়েব উদ্দিন লাভুলু। অপর দিকে মনোনয়ন না পেয়েও পাশে থেকে ভোট করার প্রত্যায় ব্যাক্ত করে সোমবার উৎসব মুখর পরিবেশে দলীয় প্রার্থীর সাথে উপজেলা রির্টানিং অফিসারের কার্যালয়ে এসে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সাবেক বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলী। বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল সৃষ্টি করেছে।
দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে বাঘা উপজেলা আ’লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেই কাউন্সিলে প্রয়াত আব্দুস সামাদ সভাপতি নির্বাচিত হন। একই সাথে সাধারণ সম্পাদক হন আক্কাছ আলী। সেই বার সামান্য ভোটে পরাজিত হন বাঘা শাহদৌল্লা ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক মকবুল হোসেন। এতে মকবুল হোসেনের পক্ষে ছিলেন তৎকালিন রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি লায়েব উদ্দিন লাভলু। আর তখন থেকে আক্কাছ আলীর সাথে লাভলুর দুরুত্ব সৃষ্টি হয়।
এর আগে ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের পক্ষে ব্রিগেডিয়ার আনিছুর রহমানের পক্ষে ভোট করেন লায়েব উদ্দিন লাভলু । অপর দিকে নৌকা প্রতিক নিয়ে বার-বার পরাজিত হয়ে দলবদলের পর বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী ডাক্তার আলাউদ্দিনের পক্ষে ভোট করেন আক্কাছ আলী। এ ঘটনায় দুই নেতার মধ্যে দুরুত্ব বাড়ে। এর কিছুদিন পর ডা: আলাউদ্দিন মৃত্যুবরণ করলে ২০০১ সালে এখানে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে আ’লীগের বহিরাগত দলীয় প্রার্থী নুরুল ইসলাম ঠান্ডু (নৌকা)র পক্ষ নেন আক্কাস আলী। প্রক্ষান্তরে স্থানীয় স্বতন্ত্র প্রাথী রায়হানুল হক রায়হান (প্রজাপতি)র পক্ষ নেই লায়েব উদ্দিন লাভলু। তাতে জয়যুক্ত হন রায়হানুল হক রায়হান। এমনি ভাবে চলতে থাকে দুই নেতার মধ্যে দুরুত্ব ও পক্ষপাতিত্ব। জাতীয় যে কোন কর্মসুচী পালন থেকে শুরু করে উপজেলায় আ’লীগের অনুষ্ঠান হতে থাকে পৃথক-পৃথক ব্যানারে।
এদিকে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয় পান রায়হানুল হক রায়হান। তাতে বিদ্রোহী প্রার্থী হন আক্কাস। এর ফলে এখানে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন কবির হোসেন। পরবর্তী সময় ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আজকের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ শাহরিয়ার আলমের পক্ষে এক সাথে ভোট করেন লাভলু-আক্কাছ। কিন্তু ওই ভোটের পর ২০০৯ সালে উপজেলা নির্বাচনে এসে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক লভিং-গ্রুপিং আবারও প্রকাশে রুপ নেয়। কারণ ওই নির্বাচনে আ’লীগের দু’জন প্রার্থী ভোট যুদ্দে নামেন। একজন লায়েব উদ্দিন লাভুল এবং অপরজন প্রয়াত মিজানুর রহমান। এখানে মিজানুর রহমানের পক্ষে ভোট করেন আক্কাছ আলী। ফলে সেইবার বিএনপি থেকে এখানে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বয়েজুল ইসলাম খান।
স্থানীয় ত্যাগী আ’লীগ নেতারা জানান, এই দুই নেতার মধ্যে পরবর্তী খেলা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে। সেইবার রাজশাহী জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এড: লায়েব উদ্দিন লাভলু, বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলী, পৌর আ’লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস সরকার এবং জেলা আ’লীগের সদস্য আমানুল হাসান দুদু জাতীয় নির্বাচনে জনপ্রিয় নেতা আ’লীগের দলীয় প্রার্থী শাহরিয়ার আলমের বিপক্ষে শফত গ্রহণ করে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সাংসদ রায়হানুল হক রায়হান প্রজাপতির পক্ষে ভোট করতে নামেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আক্কাছ আলী ওয়াদা ভঙ্গ করে ফের শাহরিয়ার আলমের পক্ষে চলে যান। এতে করে শাহরিয়ার আলম নির্বাচিত হন। যার সত্যতা স্বীকার করেন আব্দুল কুদ্দুস সরকার ও আমানুল হাসান দুদু।
তবে ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয় ওই নির্বাচনের পর উপজেলা আ’লীগের কাউন্সিলে। সেখানে শাহরিয়ার আলমের সাথে অভ্যান্তরীন বিষয় নিয়ে দুরুত্ব সৃষ্টি হয় আক্কাস আলীর। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে আক্কাস আলীকে পরাজিত করে আশরাফুল ইসলাম বাবুলকে সাধারণ সম্পাদক তৈরী করতে সহায়তা করেন লাভুল। এরপর ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাঘা পৌর সভার ভোটে আবারও পরাজিত হন আক্কাস আলী। এতে করে জনপ্রিয়তা হারান আক্কাছ।
আক্কাছ আলীর ঘনিষ্ঠজনরা জানান, পৌর নির্বাচনে আক্কাছ আলীকে পরাজিত করে এখানে বিএনপির প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক বিজয়ী হওয়ার পর তাকে ফেল করানোর অপবাদ চলে আসে স্থানীয় সাংসদ শাহরিয়ার আলম ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল সহ-তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে। তখন থেকে নিজের প্রয়োজনে লাভলুর সাথে মিশতে শুরু করে আক্কাছ আলী । সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চান এই দুই নেতা আক্কাস ও লাভু।
শেষ পর্যন্ত তৃতীয়বার এই আসনে আবারও নৌকার মাঝি হিসাবে দলীয় মনোনয়ন পান শাহরিয়ার আলম। এতে করে অনেকটায় বেঁকে বসেছিলেন এই দুই নেতা। অবশেষে মহানঘর আ’লীগের সভাপতি এএইসএম খাইরুজ্জামান লিটন ও জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ নির্বাচনের ৯ দিন পুর্বে তাঁদের একত্রিত করেন।
উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াহেদ সাদিক কবির বলেন, দেশে প্রথম বারের মতো দলীয় প্রতিকে ১০ মার্চ যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এখানে দলীয় ভাবে মনোনয়ন চেয়ে ছিলেন-আক্কাস আলী , লায়েব উদ্দিন লাভলু ও আসরাফুল ইসলাম বাবুল -সহ আরো অনেকে । শেষ পর্যন্ত উপজেলা আ’লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় স্থানীয় সাংসদ সহ ৫ সদস্যের কমিটি থেকে চেয়ারম্যান পদে এই তিন জনের নাম কেন্দ্রে পাঠানো পাঠান। সেখান থেকে মনোনয়ন ছিনিয়ে আনেন বর্তমান জেলা আ’লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এড: লায়েব উদ্দিন লাভলু ।
তবে শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন না পেলেও এবার লাভলুর পক্ষে ভোট চাইবেন বলে সোমবার উপজেলা রির্টানিং অফিসারের কার্যালয়ে তাঁর পাশে থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সাবেক বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলী। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, আ’লীগ নেতা আমানুল হাসান দুদু, অধ্যক্ষ নছিম উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম মন্টু, ওয়াহেদ সাদিক কবির, আব্দুল কুদ্দুস সরকার, রোকনুজ্জামান রিন্টু, নছিম উদ্দিন, কামাল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল খালেক, ওহিদুর রহমান প্রমুখ। এর আগে প্রার্থী লায়েব উদ্দিন লাভলু বাঘার ঐতিহাসিক হযরত শাহদৌল্লার মাজার জিয়ারত করেন ।
এই নির্বাচন প্রসঙ্গে আ’লীগের ডজন খানেক নেতা ও তৃণমুল আ’লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা বলেন, আক্কাস আলী ১০ বছর পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করে ফেল করেছে। এ দিক থেকে আমরা এড: লায়েব উদ্দিন লাভলুকে জনপ্রতিনিধি হিসাবে কখনো পাইনি। এবার তাকে দলীয় প্রতিকের মাধ্যমে প্রথমবার উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে দেখতে চাই তিনি এলাকাবাসির জন্য কি করছেন ।
সাম্প্রতিক মন্তব্য