ট্রাইব্যুনালের রায়ে ৬ ভোটে জয়ী মিজানুর রহমান মিন্টু
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুরের ৫ নম্বর বিলমাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনের ফলাফল (গেজেট) নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে বাতিল করা হয়েছে। এতে মিজানুর রহমান মিন্টু নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফলে মাত্র ছয় ভোট বেশি পেয়ে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ ২০২৩) বিকেলে নাটোরের নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. শামসুল আল-আমীন লিখিত আকারে পূর্ণাঙ্গ এই রায় ঘোষণা করেন। তবে ১৩ মার্চ রায় ঘোষণার নির্ধারিত দিন ধার্য ছিল।
মামলায় মিজানুর রহমান মিন্টুর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মেহেদী হাসান প্রিন্স ও ছিদ্দিক আলী মিষ্টুর পক্ষে ছিলেন ফিরোজ হোসেন।
নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর ৫ নম্বর বিলমাড়িয়া ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ছিদ্দিক আলী মিষ্টু ৪ হাজার ৮৬৫ ভোট পান। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মিজানুর রহমান মিন্টু আনারস প্রতীক নিয়ে ৪ হাজার ৮৫১ ভোট পান। মাত্র ১৪ ভোট বেশি পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন ছিদ্দিক আলী মিষ্টু। এরপর ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর গেজেট প্রকাশ হলে ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করেন। এদিকে মিজানুর রহমান মিন্টু ৮ নম্বর মোহরকয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৯ নম্বর মোহরকয়া নতুনপাড়া কারিগরি ও ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট কেন্দ্রে ভোট পুন:গণনার আবেদন করেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল ওই ইউপির ৮ ও ৯ নম্বর ভোটকেন্দ্রের ভোট পুনর্গণনা করে। এতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত ছিদ্দিক আলী মিষ্টু পান ৪ হাজার ৮৪০ ভোট। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মিজানুর রহমান মিন্টু ৪ হাজার ৮৪৬টি ভোট পান। তবে ওই দিনই (২৮ আগস্ট ২০২২) ছিদ্দিক আলী মিষ্টু সব কেন্দ্রের ভোট পুনর্গণনার জন্য আবেদন করলে শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন খারিজ করে দেন। একই সঙ্গে মিজানুর রহমান মিন্টুর মামলাও খারিজ হয়ে গেলে ওই আদেশের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনালে (যুগ্ম জেলা জজ-১) আপিল করেন। পরে শুনানি শেষে ১৩ মার্চ রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়। তবে ওই দিন রায় প্রকাশিত হয়নি। পরে বুধবার বিকেলে নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনাল আপিল মামলার লিখিত রায় সরবরাহ করেন।
রায় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আপিল ট্রাইব্যুনাল ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ঘোষিত রায় বাতিল করেছেন। একই সঙ্গে ছিদ্দিক আলী মিষ্টুকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা নির্বাচন কমিশনের আগের গেজেট বাতিল করেছেন। পাশাপাশি মিজানুর রহমান মিন্টুকে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী ঘোষণা করে নতুন গেজেট প্রকাশের নির্দেশনা দিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বিলমাড়িয়া ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোট গণনায় ত্রুটি ছিল। প্রার্থী মিজানুর রহমান মিন্টুর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ ও ৯ নম্বর কেন্দ্রের ভোট গণনায় ত্রুটি ধরা পড়েছে। পরে ভোট পুনর্গণনা করে দেখা যায়, পরাজিত প্রার্থী নির্বাচিত প্রার্থীর চেয়ে ছয় ভোট বেশি পেয়েছেন।
উপজেলা বিএনপির যুগ্মআহবায়ক ও বর্তমান চেয়ারম্যান ছিদ্দিক আলী মিষ্টু আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, তিনি প্রতিকারের জন্য উচ্চ আদালতে যাবেন।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিন্টু বলেন, সত্যের জয় হয়েছে। আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। এর আগে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনে হারানো হয়েছিল।
আইনজীবী ফিরোজ হোসেন বলেন, এই আদেশে আমি ক্ষুব্ধ। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে স্টে-পিটিশন (স্থগিত আদেশের আবেদন) করা হবে। আদালত শুধুমাত্র দুইটি কেন্দ্রের ভোট গননা না করে। ন্যায় বিচারের খাতিরে ৯টি কেন্দ্রের ভোট পূন:গননা করেননি। এ আদেশ প্রভাবিত ও এক তরফা হয়েছে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য