বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস
প্রাপ্তি প্রসঙ্গ ডেস্ক। ।
বুধবার (১৪ নভেম্বর) বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘ডায়াবেটিস প্রতিটি পরিবারের উদ্বেগ’ ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবার বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিসহ (বাডাস) বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে দেশব্যাপী ডায়াবেটিস সম্পর্কিত সচেতনতামূলক পোস্টার, লিফলেট বিতরণ ছাড়াও র্যালির আয়োজন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের ৮০০ স্থানে বিনা মূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করবে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। দুপুরে বারডেম হাসপাতালে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে সমিতি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালে এ বিষয়ে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শোভাযাত্রা ও সভা-সেমিনার করবে।
বৈশ্বিক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মৃত্যুর সপ্তম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। ২০৪০ সালে মৃত্যু বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। আর সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগটি এখন প্রায় প্রতিটি পরিবারের উদ্বেগের বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকোর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ৩৮ জন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষক বিশ্বের ১৯৫টি দেশে ২৫০টি রোগে মৃত্যু ও ভবিষ্যতে কোন রোগে বেশি মৃত্যু হবে, তার পূর্বাভাস দিয়েছেন। ওই অনুমিত হিসাবে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে ৩১ হাজার ৪৬০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এই অসংক্রামক রোগে ২০৪০ সালে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৬৯ হাজার ৭৫০ হবে। অর্থাৎ মৃত্যু দ্বিগুণের বেশি হবে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট গত মাসে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ওই গবেষণা অনুযায়ী, মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে সপ্তম স্থানে আছে ডায়াবেটিস। অন্য রোগগুলো হচ্ছে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, দীর্ঘস্থায়ী বক্ষব্যাধি, নবজাতকের মৃত্যু ও নিম্ন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ। ২০৪০ সালে ডায়াবেটিস চলে আসবে পঞ্চম স্থানে।
মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারে ডায়াবেটিস নিয়ে উদ্বেগ বেশি। ইনসুলিন সহজলভ্য করার পাশাপাশি এই রোগ প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করা জরুরি।
ডায়াবেটিসের কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা, হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে। অসংক্রামক রোগ নিয়ে সরকারের ২০০৬ সালের জরিপে (স্টেপস ২০০৬) বলা হয়েছিল, প্রাপ্তবয়স্কদের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সরকার অতি সম্প্রতি এ বিষয়ে আরও একটি জরিপ (স্টেপস ২০১৮) শেষ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্কদের ৬ দশমিক ৪ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত। অর্থাৎ ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ৭৬ লাখের বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। এ ছাড়া আরও কয়েক লাখ শিশু ডায়াবেটিসে (টাইপ-১) আক্রান্ত।
পরিসংখ্যান বলছে, দেশের বহু পরিবারে এক বা একাধিক ডায়াবেটিসের রোগী আছে। এই রোগ একবার হলে আর ভালো হয় না। রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ মানুষের মতো জীবনযাপন করা সম্ভব।
সরকার কী করছে—জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ডা. নূর মোহাম্মদ বলেন, দেশব্যাপী ডায়াবেটিস রোগীদের চিহ্নিত বা শনাক্ত করার কাজ আছে অধিদপ্তরে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে উপজেলা হাসপাতাল থেকে মানুষ বিনা মূল্যে ডায়াবেটিসের ওষুধ পাবে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, এটি জীবনব্যাপী রোগ বলে এর জন্য খরচ অনেক বেশি হয়। সব পরিবারের পক্ষে সেই খরচ বহন করা সম্ভব নয়। মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারে এই উদ্বেগ বেশি। তিনি বলেন, ডায়াবেটিস টাইপ-১ রোগীদের বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় নিয়মিত ইনসুলিন নেওয়া। ইনসুলিন পাওয়া তাদের অধিকার। সরকারের উচিত ইনসুলিন প্রাপ্যতা সহজ করা। যারা কিনতে পারে না, তাদের বিনা মূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা করা।
সাম্প্রতিক মন্তব্য