logo
news image

করোনার কাছে আপনি আমি শুধুই একটি সংখ্যা

মোঃ কামরুল ইসলাম :
২১২, ২০১ কিংবা ১৯৯ এ গুলো শুধু একেকটা সংখ্যা নয়, একেকটা পরিবারের আর্তনাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। করোনা ভাইরাস এমন একটি মূর্তিমান অদৃশ্য আতংক, যার থেকে মুক্তির একটি মাত্রই পথ খোলা আছে, তা হচ্ছে নিজের সচেতনতা। প্রায় দেড় বছর হতে চলল, সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস দাপুটে ভাব দেখিয়ে এগিয়ে চলেছে, থেমে যাবার কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। আমরা সবসময় সবক্ষেত্রে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলি কিন্তু হয়ে উঠেনা। একটি দেশের শাসন-অনুশাসন কিংবা বিশ্বের পরাশক্তি দেশগুলো সব সময় শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখছি কিন্তু করোনা ভাইরাস সবাইকে সমপরযায়ে সমান নিক্তি দিয়ে মেপে চলেছে। ধনী গরিবের কোন পার্থক্য করেনি।
করোনা ভাইরাসের উপস্থিতিকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য যে দেশই করেছে তাকেই চরম খেসারত দিতে হয়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বীরদর্পে এগিয়ে চলার প্রথম ধাপ শেষ করে প্রায় সব দেশেই দ্বিতীয় ধাপ অতিক্রম করছে। করোনা ভাইরাসের আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে বিশ্বের প্রায় কয়েকটি দেশ ভ্যাকসিন আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছে। সেখানে কোনো টীকার উপর নির্ভরতার হারই শতভাগ নয়। কিন্তু এসকল টীকা মানুষের শরীরের ইমিউনিটির হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু করোনাভাইরাস এর আক্রমন থেকে পুরোপুরি সুরক্ষা পাওয়া যাবে তা ভাবার কোনো কারন নেই। দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেয়ার পরও করোনা সংক্রান্ত সকল ধরনের স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে চলার বাধ্য বাধকতা দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
করোনা ভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি দেশের সরকার বিশেষ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চরম নাজুক অবস্থায় আছে। সর্বশেষ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলমান করোনা সংকট মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হওয়ার কারনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এমনকি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উভয়ই নানাবিধ সমালোচনার মুখে পরতে হয়েছে খোদ জাতীয় সংসদেও। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্যখাত যে কত দূর্বল, তা অঙ্গুলি দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান যে কত অসহায় তা বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব রোধ করার জন্য শুরু থেকেই সব দেশের সরকার নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য নানাবিধ পরিকল্পনা সাজানোর চেষ্টা করেছে। কখনো লকডাউন, কখনো শাটডাউন, কখনো দেশে সাধারন ছুটি ঘোষণা করে কিংবা কারফিউ এর মতো কঠিন নির্দেশনাও দিতে বাধ্য হয়েছে। জনসাধারনের চলাচলকে স্থবির করার জন্যই এ সকল ব্যবস্থা নিতে সব দেশের সরকার প্রয়োজনের তাগিদে এ সকল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারন হিসেবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর জন্য ব্যক্তি দূরত্ব কিংবা সামাজিক দূরত্ব বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
হাসপাতালগুলোতে পরযাপ্ত সংখ্যক আইসিইউ সীটের সুবিধার সাথে অক্সিজেন সরবরাহের পরযাপ্ত সুবিধা বাধ্যতামূলক। কারো শরীরে করোনা ভাইরাসের আক্রমনের লক্ষণগুলো দেখা দিলে করোনা শনাক্তকরনের সুবিধা থাকতে হবে সবখানে। নতুবা বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হাতছানি দিয়ে ডাকবে।
জীবন ও জীবিকা উভয়েই অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে শুরু থেকেই জীবন ও জীবিকা সাংঘর্ষিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে । বেঁচে থাকার প্রয়োজনে মানুষের জীবিকা নির্বাহ করা খুবই জরুরী। যারা দিনমুজুর, নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের পক্ষে দিনের পর দিন কর্মবিহীন জীবনযাপন কোনোভাবেই সম্ভব হয়ে উঠে না। অনুন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সেই শ্রেনীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারের যে পরিমান খাদ্য সহায়তা দেয়া প্রয়োজন সে পরিমান দেয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না। নিম্ন আয়ের মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কখনো আর্থিক সুবিধা কিংবা কখনো থাদ্য সহায়তা দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করছে কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে এখন পরযন্ত বাংলাদেশে ১৬ হাজারের অধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে করোনা আক্রান্ত হয়ে আর ১০ লক্ষের অধিক আক্রান্ত হয়েছে। প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় ধাপ অনেক বেশী শক্তিশালী ভাবা হচ্ছে। গড়ে সারা বিশ্বে প্রায় ১০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে করোনা আক্রান্ত হয়ে। এখন পরযন্ত ৪০ লক্ষ ৪০ হাজারের অধিক মৃত্যুবরণ করেছেন এবং ১৮ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সারাবিশ্ব আজ আতংকগ্রস্ত। একদিকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ অন্যদিকে করোনাভাইরাসের সামনে এগিয়ে চলা।
মানুষের গায়ে ভর করে করোনাভাইরাস আজ বিশ্ব ভ্রমণ করে বেড়াচ্ছে। কত অসহায় করে তুলছে মানুষকে? করোনাভাইরাসের আক্রমন থেকে নিজেকে বাঁচাতে হলে সর্বপ্রথম নিজেকেই সচেতন হতে হবে এবং সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। সেই সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্য বিষয়ক সকল ধরনের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। আপনি আমি শুধুই একটি সংখ্যা। নিজের সচেনতায় সংখ্যাটি বড় না করে নিয়ন্ত্রন করি।
আসুন নিজে বাঁচি, অন্যকে বাঁচাতে সহায়তা করি। সুন্দর পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখি।

* মোঃ কামরুল ইসলাম: সভাপতি, সাস্ট ক্লাব লিমিটেড, E-mail: Islam.kamrul.72@gmail.com

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top