জুনিয়র কনসালটেন্ট পদে নতুন নিয়োগে চিকিৎসকদের মধ্যে হতাশা
ইমাম হাসান মুক্তি, প্রতিনিধি, নাটোর (লালপুর):
সরকারি চিকিৎসকদের উচ্চতর গ্রেড জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেস্থেসিওলজি) পদে পদন্নোতি না দিয়ে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে হতাশা দেখা দিয়েছে।
এদিকে বর্তমানে চাকরিরত স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে বিস্তারিত অবগত করে গত ২৬ জুলাই ২০২১ স্মারকলিপি দিয়েছেন। তারা মনে করেন এই করোনা মহামারীতে এনেসথেসিওলজিস্টিরা যেভাবে জীবন ঝুঁকি নিয়ে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন সরকার তাদেরকে কখনোই বঞ্চিত করবেন না। এ ব্যাপারে তারা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ৪০৯ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট আনাস্থেসিওলজি ষষ্ঠ গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ার বিজ্ঞাপন গত ১৩ জুলাই ২০২১ তারিখে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে যোগ্যতা হিসেবে চাওয়া হয়েছে বিএমডিসি অনুমোদিত এমবিবিএস ডিগ্রীসহ পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা এবং এনেসথেসিয়া বিষয়ে বিএমডিসি অনুমোদিত উচ্চতর ডিগ্রী।
জুনিয়র কনসালটেন্ট পদটি স্বাস্থ্য ক্যাডারের উচ্চতর ষষ্ঠ গ্রেডের পদোন্নতির পদ। এই পদে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া যায় না। শুধুমাত্র সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারী ব্যক্তিদেরই পদোন্নতি দেওয়া হয়। এই পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য যোগ্যতা শুধুমাত্র বিএমডিসি অনুমোদিত এমবিবিএস ডিগ্রি, পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা ও উচ্চতর ডিগ্রি উচ্চতর ডিগ্রী থাকলেই হয় না। কারণ এই পদে ক্লিনিক্যাল কাজের সাথে সাথে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাজও জড়িত। এই পদের কর্মকর্তাকে সরকারের নিয়ম-কানুন জানা অত্যন্ত জরুরি। সরকারিভাবে একজন স্বাস্থ্য ক্যাডার নবম গ্রেডের যোগদান করার পর পদোন্নতির জন্য দুই বছর উপজেলা পর্যায়ে চাকরির পাশাপাশি তিনটি বিষয়ে বিভাগীয় পরীক্ষায় পাস, তিন বছরের সন্তোষজনক চাকরির সনদ (এসিআর) এবং দুই মাসের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ সফলতার সাথে উত্তীর্ণ করে চাকরি স্থায়ী করতে হয়। এরপর চাকরি স্থায়ী সাপেক্ষে তিনটি বিষয়ের উচ্চতর স্কেল পরীক্ষায় পাস করে পাঁচ বছরের চাকুরীর সন্তোষজনক সনদ ও উক্ত বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পরেই ষষ্ঠ গ্রেডে জুনিয়র কনসালটেন্ট পদে পদায়নের যোগ্য হন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শূন্যপদ ছাড়া তাদের পদোন্নতি হয় না। বিগত ৯ বছরে মাত্র ২৬৩ জন বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের থেকে এনেসথেসিয়া বিষয়ে জুনিয়র কনসালটেন্ট পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
যেখানে শূন্যপদ ছাড়া পদোন্নতি হয় না সেখানে শুধু মাত্র ৫ বছরের অভিজ্ঞতা ও উচ্চতর ডিগ্রির সাপেক্ষে নতুন যদি ৪০৯ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট নিয়োগপ্রাপ্ত হলে বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসকরা আগামী ১০ বছরেও শূন্যপদের অভাবে পদোন্নতি পাবে না। এতে তারা কর্মস্পৃহা হারাচ্ছেন, হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন।
করোনা মহামারী প্রথম দিন থেকেই সেবাই নিয়োজিত কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হিরোম্ব রায় হতাশার সাথে বলেন, ‘আমি নিজে ৯ বছর থেকে কাজ করে যাচ্ছি। ডিগ্রী করেছি এখনো প্রমোশন পায়নি। সে ক্ষেত্রে কেন শুধুমাত্র ৫ বছরের অভিজ্ঞতা ও উচ্চতার ডিগ্রি দিয়েই পদোন্নতি দেওয়া হবে? যোগ্যতা সম্পন্ন সরকারি লোকদের কেন আগে প্রমোশন দেওয়া হচ্ছে না। কেন বাইরে থেকে নতুন নিয়োগ করতে হচ্ছে। সরকারিদের পদোন্নতি দিলে দ্রুততার সাথে তারা সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারবে। যেটা বাইরে থেকে নতুনভাবে নিয়োগ দিলে তাদের কাজ বুঝতেও যেমন সময় লাগবে তেমনি সরকারি রাজস্ব খাতেরও খরচ বাড়বে।’
৩৩তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার সমিতির সভাপতি ডা. সৈয়দ শাহীদ বলেন, এটা স্বাস্থ্য ক্যাডারের জন্য খুবই হতাশার বিষয়। দুই বছর ধরে করোনায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদের পদন্নোতি বঞ্চিত করে নতুন নিয়োগ দেওয়া স্বাস্থ্য ক্যাডারের যোগ্য চিকিৎসকদের জন্য অসম্মানের। আশাকরি আমাদের সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবেন। এই করোনাকালীন সময় অক্লান্ত পরিশ্রম করা যোগ্য চিকিৎসকদের বঞ্চিত করবেন না।
সাম্প্রতিক মন্তব্য