সামাজিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বেষ্টনীর টেকসই খুঁটি আছে তো?
-প্রফেসর ড. মো: ফখরুল ইসলাম:
সামাজিক নিরাপত্তা ও এর বেষ্টনী সম্পর্কে আমাদের সাধারণ মানুষ এখনও সঠিক ধারণা রাখেন না। যেমনটা রাখেন না পেশাদারী সমাজকর্ম বিষয়ে। ভিক্ষুক প্রতিদিন দরজায় কড়া নেড়ে ভিক্ষা মাগলে আমরা কিছু দেবার চেষ্টা করি। এর ভেতরের অনুপ্রেরণাটা হলো কেউ কারো কাছে হাত পাতলে খালি হাতে তাকে ফেরাতে নেই। কিন্তু একজন অভাবী মানুষ কি প্রতিদিন দরজায় এসে হাত পাততে থাকবে? এই দর্শনও তো রয়েছে যে, কেউ যেন অভাবের তাড়নায় বার বার কিছু পেতে আবেদন জানাতে না আসে। কারণ, প্রতিটি মানুষের ব্যক্তি মর্যাদা রয়েছে। এই ব্যক্তি মর্যাদা যাতে লুপ্ত হয়ে না যায় সেজন্য যার যার শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা ও দক্ষতা অনুযায়ী নিজে কাজ করে তা থেকে উপার্জন করা অর্থ দিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
মানুষের কর্মক্ষমতা সব সময় একরকম থাকে না। এছাড়া প্রাকৃতিক বা দৈব দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, বার্ধক্য, বেকারত্ব, শিল্প দুর্ঘটনা, করোনার মত দীর্ঘমেয়াদী অতিমহামারী ইত্যাদির কারণে একজন বিত্তশালী, সবল মানুষ হঠাৎ নিরুপায় ও নির্ভরশীল হয়ে যেতে পারেন। যার ফলে তিনি ও তার উপর নির্ভরশীল পরিবার পথের কাঙ্গাল হয়ে যেতে পারেন। সেই অনাকাঙ্খিত অবস্থার মুখোমুখি হলে তাঁদেরকে কে দেখবে? কে তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা দিতে এগিয়ে আসবে? এমন দুর্দিনে তাঁদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করার সরকারী ব্যবস্থাই হলো ‘সামাজিক নিরাপত্তা’। আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রসমূহ সরকারী ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের অভাবী জনগণকে আপদকালীন সময়ে যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় সেগুলো সাধারণত: ‘সামাজিক নিরাপত্তা’কর্মসূচির অন্তর্ভূক্ত। এভাব্ সুইডেন, ফিনল্যান্ড, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশ তাদের নিরুপায় ও নির্ভরশীল জনগণকে বেকার ভাতা, বয়স্ক ভাতা, চিকিৎসা ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকে। আমাদের দেশেও বয়স্কভাতা, পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ইত্যাদি দেয়ার রাষ্টীয় বিধান রয়েছে। তবে আমাদের দেশে চিকিৎসা বীমা ও জরুরী চিকিৎসা ভাতা রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু করা উচিত।
সামাজিক নিরাপত্তা হলো সেই ব্যবস্থা যা রাষ্ট্র কর্তৃক দল মত নির্বিশেষে উল্লিখিত বিশেষ শ্রেণির জনগণকে বিশেষ অবস্থায় সরকারী ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত প্রদান করা হয়। আমরা এই ধারণা থেকে সরে এসে বুঝি যে, সরকারী সাহায্য শুধু ভোট দেয়া ও ভোট নেয়ার ওপর নির্ভরশীল। আর এই সংকীর্ণ ধারণা থেকে আমাদের দেশে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা শুধু রাজনৈতিক লেন-দেনের মধ্যে ঘুরপাক খেয়ে জবাবদিহিতার বাইরে গিয়ে এক অতিদুর্বল সামাজিক নিরাপত্তার দ্বারস্থ করেছে।
তাহলে দেখা যাক্ সামজিক নিরাপত্তাকে সমাজকর্ম দর্শনে কী বলা হয়েছে। ‘এন ইনট্রোডাকশন টু স্যোসাল ওয়েলফেয়ার’ গ্রন্থে মণীষি ওয়াল্টার এ. ফ্রিডল্যান্ডার বলেন, ‘আধুনিক জীবনে সংঘটিত অনাকাঙ্খিত অবস্থার বিরুদ্ধে একটি রক্ষাকবচমূলক কর্মসূচি হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা যা বিভিন্ন দূরাবস্থা যেমন, অসুস্থতা, বেকারত্ব, শিল্প দুর্ঘটনা, অক্ষমতা ইত্যাদির ক্ষেত্রেও মানুষকে প্রোটেকশন দেয়।’ এছাড়া ১৯৪২ সালে যুক্তরাজ্যে লর্ড উইলিয়াম বিভারেজ কর্তৃক প্রণীত রিপোর্টের ভিত্তিতে সামাজিক নিরাপত্তা আইন ও কর্মসূচি তৈরী হয়। তার বর্ণনায় সামাজিক নিরাপত্তা হচ্ছে-“ A job when you can earn and an income when you cannot.”
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী (social safety net) হলো এমন একটি নিরাপদ বেড়াজাল যার মাধ্যমে সমাজের অসহায় ও পিছিয়ে পড়া মানুষকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়। এটা কোন দেশের সার্বিক সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা (social security system) বা কর্মসূচির একটা অংশমাত্র। সামাজিক নিরাপত্তা হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা যা বিভিন্ন কর্মসূচী এবং আইনগত উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজের মানুষের মধ্যে পরস্পর সহাবস্থান এবং সম্পৃতির একটি সুষম পরিবেশ তৈরী করে। সামাজিক নিরাপত্তা আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্রের সামাজিক নীতির অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও কেন আমাদেরে দেশে পৌনে তিন কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে তা কি কেউ অনুধাবন করতে পেরেছেন? সমাজকল্যাণ খাতের বাজেটকে বলা হতো- সবাইকে দিয়ে থুয়ে যা অবশিষ্ট থাকে তা থেকে ওখানে কিছু বরাদ্দ দিন। এটা এতিম, দরিদ্রদেরকে কিছু দেয়ার মত ভাবা হতো। পরিমাণমত অর্থের অভাবে এই মন্ত্রণালয় থেকে কোন বড় প্রকল্প হাতে নেয়া সম্ভব হতো না। যেগুলো নেয়া হতো সেগুলোও পুরোপুরি আলোর মুখ দেখার সুযোগ পেত না। বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে অদ্যাবধি এই প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। দক্ষ ও উপযুক্ত পরিচালনাকারী না থাকায় সমাজকর্ম পেশার বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতা আমাদের সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগানো যায় নি।
ফলে বেড়ায় আমাদের ধান খেয়ে ফেলেছে এবং এখনও খাচ্ছে। যে দেশে বেড়ায় ধান খেয়ে ফেলে সে দেশে কৃষকের গোলা ভরবে কীভাবে? যেদেশে গৃহহীনদের গৃহ তৈরীর জন্য বরাদ্দকৃত টিন পুকুরের পানিতে লুকিয়ে রাখা হয় সেদেশে গৃহহীন মানুষ তো থাকবেই। সম্প্রতি খবরে জানা গেছে- রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে লবিং করে একই জায়গায় দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে উঠেছে। অন্য একটি সংবাদে জানা গেছে- আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পেয়েছে বিত্তশালীরা এবং সেই ঘরে ভাড়া দিয়ে থাকছেন গৃহহীনরা। অপর আরেকটি সংবাদে জানা গেছে, যার ঘরের চাল নেই তার নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সৌর বিদ্যুৎ-এর প্যানেল। সেই প্যানেল পাওয়া দূরে থাক্, তিনি তা জানেনও না। বেনামে সে সকল সৌর বিদ্যুৎ-এর প্যানেল ব্যবহার করছে উপজেলা সদরের প্রভাবশালীরা যাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে!
সুতরাং কী করতে বলা হয়েছে, আর কী করে চলেছি আমরা! এভাবে সামাজিক নিরাপত্তা ও এর বেষ্টনী কি তৈরী করা সম্ভব? মোটেও তা সম্ভব নয়। কাজীর গরু খাতায় দেখানো হয় কিন্তু সুবিধাভোগী ভিন্নজন বিধায় নদীভাঙ্গা মানুষ গৃহহারা হয়ে পেটের জ¦ালা মেটাতে বাধ্য হয়ে বিনা টিকিটে সরকারী লোকাল ট্রেনে চড়ে নিরুদ্দেশের পথে পাড়ি জমায়। এরা একসময় বড় শহরে পৌঁছে যায় ও আনাচে কানাচে পলিথিন, খরকুটো কুড়িয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই বানিয়ে বস্তি জীবন শুরু করে। গ্রামের বাস্তুহারা সহজ-সরল মানুষ প্রথমত: হয়ে যায় রিক্সা চালক; নয়তো দিনমজুর। মহিলারা বাসায় ঝিয়ের কাজ খোঁজে। তা না পেলে অথবা সেগুলো দিয়ে সংসার চালাতে না পারলে মাস্তানদের খপ্পরে পড়ে অপরাধ জগতে পা বাড়ায়। এরাই একদিন হয়ে যায় হাইজ্যাকার, মাস্তান, খুনী। শুরু করে মাদক ব্যবসা। নিজে মাদক সেবন করে মাতাল হয়ে অথবা লোভে পড়ে বড় দাগী অপরাধী সেজে শহুরে অপরাধ জগত বেসামাল করে তোলে। আমাদের দেশে ধনী-গরীবের মধ্যে ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্য একদিকে শহুরে দারিদ্র্য বাড়াচ্ছে অন্যদিকে শহরের অপরাধ জগতকে আরো ভয়ংকর করে তুলছে।
করোনা সংক্রমণ গত দেড় বছর ধরে চলছে। গণমাধ্যমে প্রকাশ মে, ২০২১-এর মধ্যে আমাদের দেশে ছয় কোটি মানুষ কর্মহারা, পেশাহারা হয়ে চরম অভাবীদের কাতারে শামিল হয়েছে। সংক্রমণ আরো কতদিন চলবে তা কেউ জানেন না। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, করোনার এই আগ্রাসী রূপ সামনে আরো প্রচন্ড ঢেউ নিয়ে আসতে পারে। যার সুনামীর তান্ডবে পৃথিবীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। যার প্রভাবে আগামী এক যুগেও ক্ষতি সামলানো দুষ্কর হয়ে পড়বে।
তাই সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। কারণ, পিআরএসপি, এমডিজি, এসডিজি ইত্যাদির অধীনে অনেক বড় প্রকল্প ইতোমধ্যে হাতে নেয়া হয়েছিল। এগুলো দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরী করে দরিদ্র মানুষের আথ-সামাজিক উন্নয়নের ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হলেও সেই লক্ষ্যমাত্রা যৎসামান্য অর্জিত হয়েছে। কেন তা যথাযথভাবে অর্জিত হয়নি সেকথা ইতোপূর্বে তুলে ধরা হয়েছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা নীতিনির্ধারকদেরকে বিশেষভাবে ভাবিয়ে তুলছে। তা হলো- এসকল প্রকল্পের কাজের মূল ঠিকাদার দায়িত্ব পেয়ে খন্ডিতভাবে ফড়িয়া ঠিকাদারদের নিকট কাজ বিক্রির মাধ্যমে ব্যাপক অনিয়ম ও ঠিকমত কাজ না করে টাকা উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়ার রাজনৈতিক ছলচাতুরী।
সুরক্ষা বেষ্টনীর কাজে শত শত ছিদ্র বা ফুটো এই বলয়কে ভঙ্গুর করে দিয়েছে। এভাবে অভাবী মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা, ত্রাণের চাল ও পণ্যসামগ্রী লুটপাট হয়ে প্রকৃত দরিদ্র মানুষের হাতে পৌছাঁনোর আগে নি:শেষ হয়ে যাচ্ছে। গত ক’বছরে উপকূলে আইলা ও সিডর বিধ্বস্ত বাঁধ মেরামত ও নতুন বাঁধ নির্মাণের টাকার বড় অংশ কাজে লাগেনি। দু’বছর আগে ঘূর্ণিঝড় আইলা, সিডরের পর উপকূলের পুরাতন বেড়ীবাঁধের সংস্কার ও নতুন বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়েছিল। কিন্তু মে, ২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর উপকূলে দেখা গেল উল্টো চিত্র।
এতদিন বলা হতো পর্যাপ্ত বাজেট নেই। এবারে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে গত বছরের চেয়ে ১২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা বেশী বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে ছিল বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা যা ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকায়। সাধারনত: এই টাকা থেকে নিয়মিত সকল সরকারী পেনশন ও বিভিন্ন ধরনের সাহায্য ভাতা দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু এবছর করোনায় হঠাৎ দরিদ্র হয়ে যাওয়া ও নদীভাঙ্গা প্রায় ছয় কোটি অভাবী মানুষের চাপ রয়েছে। এজন্য অচিরেই সুচিন্তাপ্রসূত কর্মপরিকল্পনার অধীনে অধীনে নগদ অর্থবন্টন কর্মসূচি হতে নেয়া জরুরী।
গ্রামে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় দ্রুত গ্রামীণ খাদ্য সুরক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিন ও টাউট-বাটপারদের হাত থেকে নিরীহ মানুষকে রক্ষা করার পরিকল্পনা হাতে নিন। প্রশাসনিক দুর্নীতির প্রধান শিকার নিরীহ ও অসহায় মানুষ। কারণ বিপদের সময় তাদের পক্ষে কেউ প্রাণদিয়ে লড়াই করার জন্য এগিয়ে আসে না। সে সময় যদি তারা মামলা বা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়ে সেখানেও ঘুষ--দুনীতির ফাঁদে পড়ে তাহলে ভিটেমাটি বিক্রি করে স্বর্বস্বান্ত হয়ে ভাসমান মানুষ হওয়া ছাড়া তাদের কোন গত্যন্তর থাকে না। এভাবে ধুঁকে ধুঁকে একদিন তারা নীরবে মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করে। এটাই চরম বাস্তবতা।
তাই এদের দিকে তাকিয়ে আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর খুঁটিকে আরো গভীরে পুঁতে শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর খুঁটি টেকসই করার জন্য কেটে পরিস্কার করতে হবে বেষ্টনীর পাশের টাউট-বাটপার, চাটুকারসহ সব আগাছা। ঝেড়ে মুছে ফেলতে হবে বেষ্টনী অঙ্গনের ঘুষ-দুর্নীতিসহ সব ময়লা আবর্জনা। তাহলে জনগণ আপদকালীণ সময়ে আর্থ-সামজিক সুরক্ষা পাবে এবং প্রকৃত সম্বলহীনরা স্বাবলম্বী হবে। একবুক নতুন আশা নিয়ে নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা খুঁজে পাবে বঞ্চিত মানুষগুলো।
* প্রফেসর ড. মো: ফখরুল ইসলাম: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন, সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও সাবেক চেয়ারম্যান। E-mail: fakrul@ru.ac.bd
সাম্প্রতিক মন্তব্য