logo
news image

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে বিশেষায়িত বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের আকুল অবেদন

মো. সিমানুর রহমান।।
করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত সব দৃঢ় পদক্ষেপে দেশবাসী অনেকটা আস্থা ফিরে পেয়েছে। আপনার সাহসী পদক্ষেপেই আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে দেশকে করোনা ভাইসার থেকে হেফাজত থাকব ইনশআল্লাহ। মুজিব শতবর্ষেই  মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের আত্মস্বীকৃত হত্যাকারীকে পুনরায় ফাঁসির রায় কার্যকারী করে দেশকে কলঙ্ক মুক্ত করার জন্য আপনার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
করোনা পরিস্থিতিতে দেশকে সুরক্ষিত রাখার জন্য এবং জনগনের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য ইতোমধ্যে আপনার ৯২ হাজার কোটি টাকার বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক এনডিডিসহ (নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী) সকল প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের জন্য ৩ কোটি টাকা  বরাদ্দ প্রদানে জনগনের মনে মানসিকভাবে একটু হলেও প্রশান্তি এনে দিয়েছে। আপনার বিচক্ষনতার কারণে আপনার প্রতি জনগনের আস্থা আরো বহুগুন বেড়ে গেছে।
সরকারি,  বেসরকারি (এমপিও ভুক্ত) ও শায়ত্বশ্বাসিত সকল শিক্ষক কর্মচারীদের আপাতত কোন সমস্যা না থাকলেও বড় বিপদের মধ্যে পড়েছি আমরা বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক কর্মচারিগণ। আমরা সরকার থেকে এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কোন আর্থিক সুবিধা পাই না। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আমরা বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারিরা অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকাকালীন আমরা সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য কেউ কেউ প্রাইভেট টিউশানি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করে কোন রকম সংসার চালাতাম। যেটাকে বলা যায় ‘নুন আনতে পানতা ফুরায়’ অবস্থা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর চলতে পারছি না। কারো কাছে সাহায্য ও চাইতে পারছি না। এর মধ্যে আবার রমজান মাস আগত। এই পরিস্থিতি বর্তমানে খুবই খারাপ অবস্থা। কারো কাছে সাহায্য চাওয়া তো দুরের কথা সাহায্যের কথা মনে আসতেই লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়। কারণ আমরা-তো শিক্ষক, আত্মসম্মান বোধ টুকু ছাড়া আমাদের তো আর কিছুই নেই। এহেন পরিস্থিতিতে উপরে আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত আর নিচে আপনিই একমাত্র ভরসা। আপনার সাহায্য এই মুহুর্তে একান্ত প্রয়োজন।
 আমরা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ও স্বীকৃতির জন্য আবেদনকৃত শিক্ষক-কর্মচারী। দীর্ঘ ১০ বছর বিশেষায়িত বিদ্যালয় সমূহ এমপিওভূক্ত না থাকার কারণে আমরা সরকার থেকে কোন আর্থিক সুবিধা পাই না। সরকার ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক  নীতিমালা অনুযায়ী সরকারী বিধি মোতাবেক শিক্ষক-কর্মচারী হিসেবে আমাদেরকে নিয়োগ দিয়েও কোনরকম আর্থিক সহযোগিতা করা হয় না। এমতাবস্থায় সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য প্রাইভেট টিউশানি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করে কোন রকম চলত কিন্তু  বর্তমানে লকডাউনের কারণে ঘরে বসে অনাহারে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। তার পর আবার শিশুখাদ্য, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাস বিলের খরচ। করোনায় আপনার ঘোষিত ৯২ হাজার কোটি টাকার বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজে প্রায় ১ কোটি ৯০ লক্ষ্য পরিবার সহায়তা পাবে। সেখান থেকে আমাদের জন্য কি কিছু অংশ জন্য বরাদ্দ আছে? নাকি প্রতি বছরের মতো আর্থিক বাজেটের আয়ের অংশীদার নয় শুধু খরচের অংশীদারই হতে হবে? দশ বছর বিনা বেতনের চাকরিতে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ভরা যৌবনের সময় টুকু শেষ করে খালি হাতে এখন হতাশা এবং আতঙ্ক গ্রস্থ্যের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছি। কখন যেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাই। মারা যাওয়ার আগে যেন শুনে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, দেশ মাতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য অন্তত: কিছু একটা করে গেছেন। শুধু আমি একা নই, আমার মত সারাদেশে স্বীকৃতি প্রাপ্ত বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ৬২টির মতো। আর স্বীকৃতি না পাওয়া বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে আরও ১২০০টি। এতে মোট শিক্ষক-পেশাজীবি রয়েছে-১৭ হাজার ৬৬৮জন এবং কর্মচারী রয়েছে-এক হাজার ৩৮৫২জন মোট- প্রায় ২৮ হাজার ৫৫০জন শিক্ষক-কর্মচারী আজ মানবেতর জীবন যাপন করছে।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আমার প্রস্তাব:
১। লকডাউনের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে সকল বিশেষায়িত বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের সাহায্য প্রদান করা প্রয়োজন।
২। দেশের এই চরম ক্রান্তিকালে সরকারকে সহযোগিতার পাশাপশি বিশেষায়িদ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ফান্ড থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতি মাসে বেতন ভাতা প্রদান করা প্রয়োজন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে  কোটি টাকা অলস পড়ে থেকে লাভ কি? যদি জনকল্যাণের কাজে না লাগে। সেখান থেকে এই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা দেওয়া হলে মাসে মাত্র কয়েক কোটি টাকা খরচ হবে। অন্তত আমাদের আর বেতনের জন্য রাস্তায় নামতে হবে না। সরকারকে বিব্রত অবস্থায়ও পড়তে হবে না। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের  শিক্ষাার গুণগতমান বৃদ্ধি পাবে।
দেশে দীর্ঘদিন সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দেশের প্রতিটি মানুষের দু:খ দূর্দশা ও অভাব মোচনের জন্য দিনরাত সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। এটা এদেশের মানুষসহ পৃথিবীর সবাই জানে। সেই প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে হাতে গোনা মাত্র কয়েক শ বিশেষায়িত বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা  সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আনতে পারছে না। এই ব্যর্থতার দায়ভার আসলে কার?
৩। বর্তমান সরকার প্রধান করোনার কারণে অনেক দীর্ঘমেয়াদী সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের সাধারণ ক্ষমা করে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। বিভিন্ন গবেষনার রিপোর্টে জানা যায়, কোভিড-১৯ এ নাকি লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে। সেই হিসেবে আমি বাঁচব কি না জানি না তবে মুজিব শতবর্ষে সরকারের সাহসী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পুর্বে অন্তত: যেন এই অবহেলিত শিক্ষক হিসেবে শুনে যেতে পারি যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকেও কয়েদীদের মতো সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করে দীর্ঘ ১০ বছর পর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিশেষ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের ঘোষনা দিয়েছেন।

* মোঃ সিমানুর রহমান: প্রধান শিক্ষক, ছায়া প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়, লালপুর, নাটোর। সভাপতি, বাংলাদেশ বেসরকারি অটিজম-প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top