নিয়োগ দিতে উপ-পরিচালক পরিচয়ে অধ্যক্ষকে ফোনে হুমকি
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের তথাকথিত ডিডি জহিরুল পরিচয়ে নাটোরের লালপুরের মাজার শরীফ টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি ২০২২) বেলা ১২ টা ২ মিনিটের সময় ০১৯১৯০৪৩২১৭ নম্বর মোবাইল ফোন থেকে এ হুমকি দেন।
কথোপকোথনের হুবহু তুলে ধরা হলো, ‘আসসালামু আলাইকুম। ওয়ালাইকুম সালাম। আপনি কি প্রিন্সিপাল ইমাম হাসান মুক্তি? জি, বলছিলাম। কে বলছিলেন? আমি ডিডি জহিরুল বলছি, মাউশি থেকে। জি, ভাল আছেন? একজন ডিডির সাথে কথা বলতে হলে আগে সালাম দিতে হয়। আগেই সালাম দিয়েছি স্যার। আপনি বেসরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল না? আপনি যেভাবে কথা বলছেন মনে হচ্ছে আপনি দেশের রাজা! এটা তো ঠিক না স্যার। না আমি দেশের রাজা না। আপনি এখন কথা বলবেন না। যা বলবো শুনবেন। আপনার কলেজে ম্যাথমেটিক্সের বিবি আসমা গেছে, আজকেই ওর জয়েনিংয়ের ব্যবস্থা করেন। ঠিক আছে? যদি এটা না করেন, আপনি-আপনার চাকরী কিভাবে করেন ওটা আমি দেখবো। আপনি কি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন, ডিডি স্যার? হ্যাঁ হ্যাঁ হুমকি। আপনারা যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সে অনুযায়ী আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিয়োগ দেওয়া হবে। কোন কথায় নাই। ২০ তারিখের মধ্যে বলে কোন কথা নাই। আমি যেটা বলছি সেটা করেন। না হলে আপনার সব স্যাংশন বন্ধ হয়ে যাবে। আমি যেটা বলছি সেটা করেন।’
ওই কথোকথোনে অসামঞ্জস্য আচরণের প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ উইংয়ের উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. জহিরুল আলমের মোবাইল ফোনে (০১৭১৭২৮৫৮২৯) কথা বলে জানা যায় তিনি এ ধরণের কোন ফোন করেননি। দুপুর ১ টা ৫২ মিনিটে তাঁর সাথে কথোপকোথন হুবহু তুলে ধরা হলো-‘হ্যালো। আসসালামু আলাইকুম স্যার। আমি মাজার শরীফ টেকনিক্যাল কলেজ, লালপুর, নাটোর থেকে বলছিলাম। ভাল আছেন স্যার? জি, জি, ভাল আছি। স্যার, আপনার নাম করে আমাকে একজন ফোন দিয়েছেন। আমার নাম করে! কী বলছেন? আমার কলেজে এনটিআরসিএ থেকে একজন শিক্ষকের সুপারিশপত্র এসেছে। এনটিআরসিএ থেকে সুপারিশ? জি, স্যার নিয়োগ সংক্রান্ত। আপনাদের নির্দেশনাতে বলা আছে, তার সার্টিফিকেটগুলো দেখতে হবে, সনদপত্র যাচাইসহ নিয়োগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শুরুতেই বলি, আমি কোন ধরণের তদবির বা কোন বিষয়ে ইন্টারফেয়ার করি না। যে বলছে, সেই নাম্বারে তাকে ফোন করে কলেজে ডেকে এনে বেঁধে রাখেন, সেই সাথে একটু পিটুনি দেন। ঠিক আছে! থ্যাংক ইউ স্যার। আমি কনফার্ম হলাম স্যার। যেহেতু আপনার নাম ব্যবহার করেছে তাই ওয়েবসাইট থেকে আপনার নাম্বার নিয়ে ফোন দিলাম স্যার। ধন্যবাদ স্যার। আসসালামু আলাইকু। ওয়ালাইকুম সালাম।’
সুপারিশ প্রাপ্ত বিবি আসমা বলেন, নিয়োগপত্র ইস্যু করতে বলার জন্য তিনি শিক্ষামন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাকে সুপারিশ করেছেন। কিন্তু তিনি এ ধরণের আচরণ করেছেন তা জানেন না। তার পক্ষ থেকে ক্ষমা চান তিনি।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মো. ইমাম হাসান বলেন, এনটিআরসিএ স্মারক নং- ৩৭.০৫.০০০০.০১১.০১.০০১.২১-৬, তারিখ-২০/০১/২০২২ খ্রি. বিবি আসমা, ব্যাচ-১২, রোল-৪১৪০১৩৭০, রেজিস্ট্রেশন নং-২০১৫১২০০৭৬২৫, অত্র কলেজের প্রভাষক, গণিত (বিএম) পদে নিয়োগ সুপারিশপত্রের প্রেক্ষিতে তিনি চাহিদা মোতাবেক যথাযথ কাগজপত্র ছাড়াই ২৯/০১/২০২২ খ্রি. উক্ত পদে নিয়োগপত্র প্রাপ্তির জন্য আবেদন করেন। এমতাবস্থায় বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত), পরিশষ্ট-ঙ (০৯) মোতাবেক ৩০/০১/২০২২ তারিখে ইস্যুকৃত পত্রে তাঁর সনদপত্র যাচাই প্রতিবেদন ও সত্যায়ন পূর্বক যথাযথ কাগজপত্রসহ এনটিআরসি কর্তৃক নির্ধারিত ২০/০২/২০২২ তারিখের পূর্বে প্রতিষ্ঠানে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি সেই নির্দেশনা অমান্য করে পত্র গ্রহণ ছাড়াই চলে যান। ডাকযোগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজের সভাপতি শামীমা সুলতানা বলেন, এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশ ও প্রার্থীর আবেদনের প্রেক্ষিতে অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক সনদপত্র সমুহ যাচাই-বাছাই পূর্বক নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যথাযথ নিয়ম মেনে নিয়োগপত্র প্রদান করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি এনটিআরসিএ ওয়েবসাইটে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে এনটিআরসিএ কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে ভূয়া নিয়োগ সুপারিশপত্রে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য