নির্বাচনে সকলেই যেমন ভোট চায়-আমরাও ভোট চাই-প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা। ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে উন্নয়নের বর্তমান ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার স্বার্থে আগামী নির্বাচনে জয়লাভের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই, যাতে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চলমান গতি বজায় থাকে এবং আমাদের শুরু করা উন্নয়ন কর্মকান্ড গুলো শেষ করা যায়। কারণ, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারার কারণে আমাদের উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল।’
শেখ হাসিনা শনিবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন (এফবিইউটিএ) আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে জনগণ যদি ভোট দেয় তাহলে হয়তো নির্বাচিত হয়ে আসবো। আর যদি নাও দেয় তাহলেও কোন আফসোস থাকবে না কারণ, বাংলাদেশে উন্নয়নের যে ধারাটা আমরা শুরু করেছি সেটা যেন অব্যাহত থাকে তা আপনারাই নিশ্চিত করবেন, সেটাই আমি চাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর একটা লক্ষ্যই ছিল টানা দুই মেয়াদে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারে তবে উন্নয়নটা দৃশ্যমান হবে যেমনটি নির্মাণাধীন পদ্মাসেতু এখন দৃশ্যমান হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘তারপরেও সামনে যেহেতু নির্বাচন এবং নির্বাচনে সকলেই যেমন ভোট চায়, আমরাও ভোট চাই। যাতে করে আমাদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকে।’
২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারার কারণে উন্নয়নের ধারাটি পিছিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন এবং দারিদ্র বিমোচনের কর্মসূচিগুলো বন্ধ করে দেওয়ার কথাও এ সময় স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
৩২শ’ মেগাওয়াট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করায় তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘তাঁর সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রাম-গঞ্জের মানুষ এখন যে পাচ্ছে, মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা যে বেড়েছে সেটা ধরে রাখতে হবে। কাজেই বাংলাদেশের জনগণ যদি মনে করে উন্নয়নের এই ধারা ধরে রাখতে হবে- আমি আশাকরি হয়তো তাঁরা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাঁদের আবার সেবা করার সুযোগ দেবে।’
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।
এফবিইউটিএ’র সভাপতি অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবায়তুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
দেশের শিক্ষা সম্প্রসারণে বর্তমান সরকারের উদ্যোগ সমুহ নিয়ে অনুষ্ঠানের শুরুতে একটি প্রামাণ্য চিত্রও পরিবেশিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত দেশ হিসেবে এগিয়ে নিতে চাই কিন্তু আমি বিশ্বাস করি একটি শিক্ষিত জাতি ছাড়া কোন দেশ ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত হতে পারে না।
তাঁর সরকার এজন্য শিক্ষাকে সব চেয়ে গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা শিক্ষক, আপনারা মানুষ গড়ার কারিগর। আপনাদের কাছে জাতির অনেক প্রত্যাশা।’
‘অবশ্যই আপনারা এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, কাজেই আপনাদের হাতে দেশের ভবিষ্যত রয়েছে, জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ গড়ার কারিগর সোনার ছেলে-মেয়েদেরকে আপনারাই গড়ে তুলবেন।’
শেখ হাসিনা শিক্ষার প্রসার এবং শিক্ষকদের কল্যাণে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসতে পারলে তাঁদের বিভিন্ন দাবি পূরণের ইঙ্গিত দেন এবং তাঁদের দাবিগুলো লিখিত আকারে তাঁর কাছে দেয়ারও পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ দেশের সব আন্দোলন সংগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদান স্মরণ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নেরও তাগিদ দেন।
তিনি এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর বেশি না বাড়িয়ে বিভিন্ন অঞ্চল ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যাতে বিভিন্ন এলাকার ছেলে-মেয়েরা ঘরে বসেই লেখাপড়া করতে পারে, সে পরিকল্পনা তাঁর সরকারের রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুক্ত রাখায় তাঁর সরকারের অঙ্গীকারের উল্লেখ করে তাঁর সরকারের গড়ে তোলা সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন জোরদার করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, সেটা করতে হলে শিক্ষক, অভিভাবক, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন জনপ্রতিনিধি,আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সকলে মিলেই করতে হবে, সরকারের একার পক্ষে সম্ভব হবে না, সমগ্র সমাজকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
তাঁর সরকারের কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারায় নিয়ে আসার উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে ১৪/১৫ লাখ ছেলে-মেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষায় সম্পৃক্ত। তাঁরাও যেন উচ্চশিক্ষা পায়, তাঁরাও যেন ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি পার্থিব শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মত মানুষ হয়ে নিজেদেরকে কর্মপেযোগী করে গড়ে তুলতে পাওে, সেটাও আমরা ব্যবস্থা করেছি।
আগামীর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে এগিয়ে যাবে বলে এ সময় দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনরকম সাম্পদায়িকতা যেন আমাদের গ্রাস করতে না পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে আমাদের ১৫১টা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যেখানে ৪৮টা পাবলিক ও ১০৩টা প্রাইভেট। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, যত বড় বড় এলাকা আছে, যেসব জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় নেই সেসব জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা। যেখানে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় নাই সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। উদ্দেশ্য একটাই যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা ঘরে বসে যাতে শিক্ষাটা পায়।
তাঁর সরকার কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়ে বসে নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য যা যা করণীয় তার সবকিছুই আমরা করে যাচ্ছি।’
জাতির পিতা শিক্ষাকে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন,‘জাতির পিতা শিক্ষাকে অবৈতনিক ঘোষণা করেছিলেন। সংবিধানে শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার মাধ্যমে জাতিকে উন্নত করতে চেয়েছিলেন।’
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারই প্রথম বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যায়ে গবেষণার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা শুরু করে। যার সুফলও দ্রুত লাভ করে।
তিনি বলেন, ‘লবণাক্ত ও খরা সহিষ্ণু, জলমগ্ন ধান আবিষ্কার করার ফলেই আজ আমরা খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শাক-সবজি উৎপাদন, মাছ উৎপাদন, ফলমূল উৎপাদনে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাতারে ওপরের দিকে রয়েছি।’
’তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আরও বেশি করে গবেষণার তাগিদ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যাতে ঠেকে না থাকে সে কারণে প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষায়ও আমরা বৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছি। ১ কোটি ৪০ লাখ শিশুকে প্রাথমিকে বৃত্তি দিচ্ছি। শিক্ষাবৃত্তির টাকা যাতে বেহাত না হতে পারে সে জন্য শিক্ষার্থীর মায়েদের মোবাইল নম্বরে টাকা পাঠানো হয়। পাহাড়ি ও হাওর অঞ্চলের শিশুদের জন্য টিফিনের ব্যবস্থাও আমরা করেছি।
‘নিজেদের অর্থে পদ্মাসেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জল করেছে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব ব্যাংকের তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নিজ এবং দেশের ভাবমূর্তিকে রক্ষা, নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাংক এবং মোবাইল কোম্পানীকে বিভিন্ন সরকারী সুযোগ সুবিধা দিয়ে প্রতিষ্ঠার সুযোগদানের পরও কেবল এমডি পদ ধরে রাখার ব্যক্তিগত স্বার্থে পদ্মাসেতুর অর্থ প্রত্যাহারে লবিং এর ষড়যন্ত্রের সমালোচনা করেন।
এই প্রত্রিয়ার সাথে যুক্ত দেশের একটি স্বনামধন্য ইংরেজী দৈনিকের সম্পাদকের দেশের স্বার্থবিরোধী অবস্থান এবং নিজ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের তৎকালিন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতদের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগের বিভিন্ন ঘটনাও এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মাসেতুর কারণে আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদেরকে অনেক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। তবুও মাথা নত করিনি। কারণ বাবার কাছে শিখেছি অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করতে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তো কখনও নিজের চিন্তা করতে শিখিনি। আমরা যা শিখেছি বাবার কাছ থেকে শিখেছি। যতটা সেক্রিফাইস করা যায়, কোনো মহৎ অর্জনের জন্য মহান ত্যাগের প্রয়োজন।’
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা ক্ষমতাটাকে ভোগের বস্তু মনে করে আর ব্যবসার সুযোগ মনে করে তারা দেশের কোনো উন্নয়ন করতে পারে না। আর নিজের ভাগ্য গড়া যাদের মাথায় থাকে তারা দেশকে কী দেবে?’
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিয়েছি। ২১০০ সাল পর্যন্ত ডেল্টা প্লান করে দিয়েছি। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এ দেশ এগিয়ে যাবে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য