কিন্তু এবং যদি বলে খুলছে হল নিচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা
-প্রফেসর ড. মো: ফখরুল ইসলাম।
ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষালয়ের ফটক খুলে গেছে। উৎসবের মধ্যে দিয়ে স্কুল খুললেও এখনও মহামারী ও ডেঙ্গুর ভয়ভীতি কাটেনি করো মন থেকে। বড় শিক্ষালয় খোলার লক্ষণ হিসেবে ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয়ের হল খুলে দেয়া হয়েছে। রাজশাহী বিশ্বাবদ্যালয়ে মেয়েদের হল খুলে দেবার ঘোষণা আসছে আজ-কালকের মধ্যে। তবে কোন কক্ষে নয়- শুধু ওপেন স্পেসে তারা থাকতে পারবে। কারণ, মেয়েদের হলের নিজ নিজ কক্ষের চাবি তো আবাসিক মেয়েরা বাড়িতে নিয়ে গেছে সংগে করে। ভর্তি পরীক্ষার সময় ১ম বর্ষে ভর্তিচ্ছু মহিলা প্রার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনে আপৎকালীণ এই সামান্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রার্থীর মা অথবা একজন মহিলা অভিভাবকে তার সংগে হলে থাকার অনুমতি দেয়া হবে না। তাদেরকে মেয়েদের জিমনেশিয়ামের ওপেন স্পেসে থাকতে বলা হবে। তবে মেয়েদের হল সংশ্লিষ্ট আবাসিক শিক্ষার্থীদেরকে আপাতত: প্রবেশ করতে দেয়ার অনুমতি নেই। অক্টোবর ০১ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ০৪ তারিখ থেকে রাজশাহী বিশ্বাবিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। তাই প্রস্তুতি নিয়ে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সেন্টার হওয়ায় ০১ অক্টোবর থেকে সেখানেও ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে।
করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমলেও ডেঙ্গুভীতি নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন। শরীরে জ্বর নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে কোন প্রার্থী এলে হল গেটেই তাকে থার্মাল মাপনীর সাহায্যে চিহ্নিত করে তাৎক্ষণিকভাবে নির্দিষ্ট আইসোলেশন সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়া হবে। সিসি ক্যামেরা ও ডাক্তারের উপস্থিতিতে সেসব অসুস্থ প্রার্থীরা আইসোলেশন সেন্টারে পরীক্ষা দিতে পারবে। কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে দ্রুত মেডিকেল সেন্টার অথবা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেবার জন্য প্রস্তুত থাকবে ৭টি এম্বুলেন্স।
তবে ছেলেদের হল খোলার সিদ্ধান্ত না হওয়ায় বড় ধরনের আবাসন সংকট সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। হোটেল ও মেসগুলোতে বুকিং নেয়া শেষ। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে রাজশাহী শহরে আবাসিক হোটেল মাত্র ৫০-৫৫টি। সেগুলোতে মোট সিট সংখ্যা মাত্র দুই-আড়াই হাজার। শিক্ষাশহর হিসেবে খ্যাত রাজশাহীতে মেসের সংখ্য অনেক বেশী। কিন্তু স্কুল কলেজ খোলা থাকায় সেগুলোতে শিক্ষার্থীরা আগেই এসে গেছে। এখন তাদের আত্মীয়-বন্ধু বান্ধবরা ধর্ণা দিয়ে তাদের নিকট ভিড়ছে। সেগুলোতে ফ্লোরিং করার মত তিল ধরণের সিট খালি বা জায়গা অবশিষ্ট নেই।
এক সংবাদে জানা গেছে, রাজশাহী শহরের হোটেল মালিকরা নাকি সমিতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দাবী জানিয়েছেন হল না খুলতে! এতে তাদের সুবিধে হবে। কারণ, করোনাকালে তাদের ব্যবসায় ধ্বস নেমে গেছে। রাজশাহী ছাড়াও নিকটস্থ জেলা ও উপজেলাশহর গুলোতেও হোটেল ও মেসে বুকিং দেয়া হয়েছে। দূরের জলা থেকে কেউ কেউ বাস ভাড়া করে পরীক্ষার আগের রাতে এসে ঐ বাসেই ফিরে যাবে বলে পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু তাদের গোসল, টয়লেট, ঘুম এবং অসুস্থতা দেখা দিলে কি যন্ত্রণা হতে পারে তা অনুমান করা কঠিন। কারণ, পূর্বেকার বছরগুলোর ন্যায় এবছর এসকল সমস্যা সমাধান করা মোটেও সহজ নয়। করোনার জন্য খোলা খাবারের ভ্রাম্যমান দোকান-পাট বসানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ঐসকল অস্থায়ী খাদ্য দোকানীরা পেশা বদল করে অন্যত্র চলে গেছে।
মেয়ে প্রার্থীদের সংগে আসা মহিলাদের টয়লেট, নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। আবহাওয়া খারাপ বা বৃষ্টি হলে সংগে আসা লক্ষ মানুষ কোথায় ঠাঁই নেবে সেটাও ভাবনার বিষয়। যদিও কর্তৃপক্ষ আপ্রাণ চেষ্টা করে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সকলকে সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছেন তথাপি বিষটি অনেক জটিল।
সারা দেশ থেকে যানবাহন ও মানুষের শরীরের মাধ্যমে করোনা ও ডেঙ্গুর জীবাণু দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে নতুন করে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পরীক্ষা সারা দেশের বিভাগীয় শহরে বিকেন্দ্রীকরণ করেছেন। ০১ অক্টোবর ঢাবির পরীক্ষা শুরু হবে। সেটাও বড় দুশ্চিন্তার বিষয়। একটি ভুল সিদ্ধান্ত যদি পুনরায় অতিমারীকে উস্কে দেয় তবে কেউ কারো দায় নিতে চাইবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বিকেন্দ্রকরণের ফলে যদি বড় সমস্যা হয় তাহলে কি হবে? সংক্রমণ বেড়ে গেলে উপায় কী হবে তৃতীয় ঢেউ মোকাবেলা করার? এজন্য অতিমারী বা ডেঙ্গু সুনামী শুরু হলে সেটা প্রতিকারের যথাযথ প্রস্তুতি থাকা দরকার।
দীর্ঘদিন সবকিছু খোলা রেখে করোনার অজুহাতে শিক্ষালয়গুলো বন্ধ রাখা হলেও এতদিনে ভ্রম ভেঙ্গেছে কর্তৃপক্ষের। কারণ শুধু শিক্ষালয় বন্ধ রেখে শিক্ষাকে অবহেলা করা মোটেও উচিত হয়নি। আর আমাদের মত আয় বৈষম্য ও অসম সমাজব্যবস্থার দেশে অনলাইন পড়াশুনা এখনও বিত্তশালীদের হাতের মুঠোয়। তাই এতদিন শিক্ষালয় বন্ধ রেখে অনলাইনে পাঠদান করার চেষ্টা সবার জন্য জ্ঞানশিক্ষাকে অবহেলা করা হয়েছে মাত্র।
এছাড়া অটোপাশ একটি মানসিক যন্ত্রণার নাম। এটাকে অনেকে উপহাস করতে দ্বিধা করে না। চাকুরী, বিয়ে, সামাজিক মর্যাদা সবকিছুতেই এটার মধ্যে তাচ্ছিল্য করার প্রবণতা তৈরী হয়। তাই পাবলিক পরীক্ষায় অটো পাশের গ্লানি বহন করতে চায় না কেউই।
এজন্য পরীক্ষা দিতেই হবে। পরীক্ষা নিতেই হবে। পরীক্ষা ছাড়া পড়াশুনার প্রকৃত মূল্য ওজন করা যায় না। কেউ পরীক্ষা ছাড়া কোনকিছুকে গুরুত্ত্ব দেয় না- শিক্ষার্থীর জন্য পরীক্ষা তাই বেশ বড় ব্যাপার। কিন্তু যদি অতিমারী বেড়ে যায় তাহলে কিন্তু আবারো বন্ধ করে দেয়া হবে শিক্ষালয়।
তাই হাজারো সমস্যা মাথায় নিয়ে যদি এবং কিন্তু বলে খুলছে হল, নিতে যাচ্ছে সশরীরে ক্লাশ-পরীক্ষা। ভাগ্য যেন সবাইকে সহায়তা করে এছাড়া আর বেশী প্রত্যাশা করার কিছু কি আছে?
* প্রফেসর ড. মো: ফখরুল ইসলাম: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন, সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও সাবেক চেয়ারম্যান। E-mail: fakrul@ru.ac.bd
সাম্প্রতিক মন্তব্য