দুইবোনের জীবন সংগ্রাম
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
মুন্নি আক্তার (৩৮) ও শাহিদা আক্তার (৩৬)। সম্পর্কে খালাতো বোন। বছর পাঁচেক আগে একজন স্বামী হারিয়েছেন, অপরজনের স্বামী ত্যাগ করেছেন। জীবন সংগ্রামে একসঙ্গে লড়ছেন দুইবোন।
বুধবার (৮ মার্চ ২০২৩) সরেজমিন নাটোরের লালপুরের আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় তাঁরা দুই বোন চা বিক্রি করছেন।
জানা যায়, বৃদ্ধ মাসহ পরিবারের ৭ সদস্য নিয়ে তাঁদের অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছিল। নিজে কিছু একটা করবেন বলে সারাক্ষণ ভাবতেন। কিন্তু অর্থের অভাবে পেরে উঠছিলেন না। পরে একটি বেসরকারি এনজিও থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সেলাই মেশিন কেনেন। সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ানো শুরু। সেলাই মেশিন থেকে অল্প অল্প করে আয়ের টাকা জমিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা ঠেলে আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশনে একসাথে চা বিক্রি শুরু করেন। এভাবেই তাঁদের সংসারে ফিরতে শুরু করে সচ্ছলতা।
মুন্নি আক্তার বলেন, দুই বোন আর এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। বিয়ের পর মেয়ে সন্তান জন্মের ৩ বছরের সময় স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়। তখন বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন। এর কিছুদিন পর সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা আর ভাই একসাথে মারা যান। ওই দুর্ঘটনায় আহত মা এখনো অসুস্থ। ছোট্ট মেয়ে আর অসুস্থ মাকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। পরে তার বিধবা খালাতো বোন শাহিদাকে নিয়ে ছয় বছরে আগে আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশনে আশ্রয় নিয়ে গড়ে তুলেন চা স্টল।
তাঁর বোন শাহিদা আক্তার বলেন, স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে বাবার বাড়িতে ২০০৮ সালে চলে আসেন। তার কিছুদিন পরই স্বামী মারা যান। আর ৩ মাস বয়সে তার ভাতিজা মাকে হারায়। তখন ওই ভাতিজা ও স্বামী হারা বিধবা বোনের এক ছেলেকে পালক নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম শুরু হয়। বৃদ্ধ মাসহ সংসারের বোঝা তাঁর কাঁধে এসে পড়ে। অর্থকষ্টে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে। তারপর পরে খালাতো বোন মুন্নির পরামর্শে যৌথভাবে ব্যবসা শুরু করেন। শুরু হয় ঘুরে দাঁড়ানো।
তাঁরা জানান, এই দোকান থেকে তাদের প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়। ওই টাকা ভাগাভাগি করে সংসার চালান তারা। এ আয় থেকে ছেলের স্কুলের খরচসহ মেটান আনুসঙ্গিক সব খরচ। সব মিলিয়ে জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ভালো আছেন। তবে চিনিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে বিপাকে পড়েছেন বলে জানান।
গোপালপুর পৌরসভার মেয়র রোকসানা মোর্ত্তজা লিলি বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে নারীদের নিজ পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। তেমনে মুন্নি ও শাহিদা দুই বোন সংগ্রাম করে তাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছে। তাদের ব্যবসা বৃদ্ধি করতে প্রয়োজন হলে পৌরসভা থেকে সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছা. শাহিনা সুলাতানা বলেন, তাঁর দপ্তর থেকে নারীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। চাইলে মুন্নি ও শাহিদা প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। তাঁরা চাইলে ব্যবসা বৃদ্ধি করতে ক্ষ্দ্রু ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা বলেন, মুন্নি-শাহিদার মতো আমাদের সমাজে অনেক নারী আছে যারা প্রতিবন্ধকতাকে প্রতিহত করে সফল হোন। জীবনমান উন্নয়নে কোন নারী চেষ্টা করলে তাকে সহযোগিতা করতে উপজেলা প্রশাসন সদা প্রস্তুত রয়েছে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য