logo
news image

সেলফি তোলা সর্ম্পকে ইসলাম কি বলে

শেখ ফরিদ আলম

হজে গিয়ে ‘সেলফি’ তোলা নিয়ে অনেক ভাই পোষ্ট করছেন। অনেকে খুব আক্রমনাত্মকভাবে, ব্যঙ্গ করেও পোষ্ট করছেন। অনেকে ছবি সহ হাজীদের ফটোও শেয়ার করছেন। ব্যাপারটা নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি হচ্ছে বলে কিছু লিখতে বাধ্য হচ্ছি। অকারণে ফটো তোলা, সেলফি তোলা নিয়ে কিছু বলছিনা। এসব ব্যাপারে সবারই একটু আধটু জানাই আছে। আমি অন্য একটা ভয়ংকর ব্যাপার নিয়ে বলছি। আমি জানতে চাইছি হজে গিয়ে সেলফি তোলাটা কত বড় গুনাহর কাজ? কত বড় অপরাধ? আপনি হয়ত বললেন রিয়া। কিন্তু এটা বিতর্কিত ব্যাপার। এভাবে উপর দেখে যদি রিয়ার অভিযোগ করা হয় তবে কেউই রিয়ার অভিযোগ থেকে বাচবে না।
আচ্ছা, হজ করতে কারা যায়? নিশ্চয় ইমানদার মুসলিমরাই হজে যায়। কারন বিশ্বাসি মুসলিম না হলে তো হজে যাবেই না। যখন এটা প্রমানিত যে তারা আমাদের মুসলিম ভাই তখন কিভাবে আমরা তাদের ছবি দিয়ে প্রকাশ্যে তাদের গিবত করতে পারি? কিভাবে তাদের অপদস্থ করতে পারি? কিভাবে তাদের ভুল গুলোর প্রকাশ্যে প্রচার করতে পারি? কোনটা বড় অপরাধ হজে সেলফি তোলা নাকি মুসলিম ভাইয়ের সম্মানহানী করা?! ভাবুন। নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে ভাববেন না, বিচার করবেন না, ইসলাম দিয়ে বিচার করুন।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয়ই কতক ধারণা গুনাহ। আর কারো গোপন দোষ অনুসন্ধান কর না এবং পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভায়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করে? তোমরা একে ঘৃণাই কর’। [সুরা হুজুরাত/১২]

বিশ্বনবী (সা) বলেছেন, ‘যখন তুমি তোমার কোন ভাইয়ের এমন দোষের কথা বলবে যা তার মধ্যে আছে, তবে তুমি তার গীবত (নিন্দা) করলে। আর যখন তুমি তার সম্পর্কে এমন কথা বলবে যা তার মধ্যে নেই তাহলে তার প্রতি অপবাদ দিলে’। (মুসলিম, মিশকাত/৪৮২৯)।
এই পরনিন্দা কত ভয়ানক তার প্রমান হল এই পাপের তওবা করে ক্ষমা হয় না। যার নিন্দা করা হয়েছে তার কাছেই ক্ষমা নিতে হয়। বড় পাপ দু’ভাগে বিভক্ত। এক, আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত যা তাওবা ব্যতীত ক্ষমা হয় না। দুই, মানুষের সাথে সম্পৃক্ত যা তাওবা করে ক্ষমা হয় না বরং মানুষের নিকট ক্ষমা নিতে হয়, আর গীবত এ পাপের অন্তর্ভুক্ত। [কে বড় ক্ষতিগ্রস্ত, আব্দুর রাযযাক; ১৩১ পৃষ্ঠা]
তাহলে কি বোঝা গেল?! যদি ধরেই নেওয়া যায় হজে গিয়ে সেলফি তোলা অপরাধ। তারপরেও সেই ছবি দিয়ে নিন্দা করে, ব্যঙ্গ করে পোষ্ট করা যাবেনা। এটা অবশ্যই গিবত। এবার অন্য আরেকটা বিষয়ে আসি। যেটা হল সুধারণা করা। একজন মুসলিম সবসময় অন্য মুসলিম ভাইয়ের ব্যাপারে সুধারণা রাখবে। এটা তার জন্য আবশ্যকীয় কর্তব্য। একজন হাজী আর যাইহোক বিশ্বাসী মুসলিম। আর বিশ্বাসী মুসলিম ভাইয়ের ব্যাপারে সবসময় সুধারণা রাখতে হবে।

 

মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা যখন একথা [‘আয়েশার (রা) বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা] শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ?” [সূরা আন-নূর, ২৪:১২]

নবী করীম (সা) বলেন: “অনুমান করা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ অনুমান হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যা। আর বেঁচে থাকো অন্যের দোষ খোঁজা থেকে, এবং অন্যের উপর গোয়েন্দাগিরি করা থেকে, বেঁচে থাকো (মন্দ কাজে) প্রতিযোগিতা করা থেকে, বেঁচে থাক অপরের হিংসা করা থেকে, অপরকে ঘৃণা করা থেকে এবং একে অপরকে পরিহার করা থেকে; এমনভাবে থাকো যেন তোমরা পরস্পর ভাই এবং আল্লাহ্‌র দাস”। [আল-বুখারী; খণ্ড ৮, অধ্যায় ৭৩, হাদীস নং ৯২]

মুসলিম ভাইয়ের কথা ও কাজকে সর্বোত্তম্ভাবে নেওয়া বা ব্যাক্ষা করাটা মুমিনের একটা ভালো গুণ। উমার (রা) বলেন, “তোমার বিশ্বাসী ভাইয়ের কোনো কথা (বা কাজ)-কে খারাপ অর্থে গ্রহণ করো না, যতক্ষণ পর্যন্ত তা ভালো অর্থে নেওয়ার সুযোগ থাকে।” ইবনে সিরিন (রহ) বলেন, “তুমি যদি জানতে পারো যে, কেউ তার কথা বা কাজের মাধ্যমে তোমার ক্ষতি করেছে, তাহলে তোমার উচিৎ সে কেন এমন করল তার উপযুক্ত কারণ খুঁজে বের করা; যদি কোনো কারণই খুঁজে না পাও, তবে তোমার বলা উচিৎ, ‘হয়তো এমন কোনো কারণ ছিল যা আমি জানি না।’

কেউ হজে গিয়ে সেলফি তুলল বা এই রকম কিছু একটা করল আর আপনি তার ছবি নিয়ে পোষ্ট করলেন। এতে কি তার কোন লাভ হল। এটা সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই নয়।এটা কোন মুসলিমের কাজও নয়। আপনি তাকে পার্সোনাল ভাবে বুঝান এবং ইসলাহ করুন। প্রকাশ্যে নয়। আপনি যদি কারো ভুল ত্রুটি গোপন করবেন তবে আল্লাহ হাশরের মাঠে আপনার ভুল গুলোকে গোপণ করবেন। এত বড় সুযোগ কেন হাতছাড়া করবেন?

একজন মুসলিম অন্য মুসলিমের জন্য আয়না স্বরুপ। তাই তাকে সংশোধন করা আপনার দায়িত্ব। তার ভুল নিয়ে আলোচনা করা একদমই উচিত নয়। মুসলিম সবসময় তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য কল্যান চাইবে। এটাই ইসলামের শিক্ষা। জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) -এর হাতে শপথ (বাইআত) গ্রহণ করেছি নামাজ কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, সকল মুসলমানের জন্য কল্যাণ কামনা ও উপদেশ দেয়ার। [বুখারী ও মুসলিম] তাই ভুলকারীদের জন্য কল্যান কামনা করুন, তাই করুন যা তাদের জন্য কল্যানকর। তাদের সঠিক উপদেশ দিন। এই সুযোগ না হলে তাদের জন্য দোয়া করুন।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top