logo
news image

দৈনিক সানশাইনের তিনযুগ পূর্তি উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
উত্তরাঞ্চলের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক সানশাইনের তিন যুগে পদার্পণ উদযাপন করা হয়েছে। সর্বদা সত্য তুলে ধরার অঙ্গিকারে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই দিবসটি উদযাপন করা হয়।
রোববার (১৯ মার্চ ২০২৩) এ উপলক্ষে দৈনিক সানশাইনের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি, নিজস্ব প্রতিবেদকসহ সম্পৃক্ত সকল কলাকৌশলীদের সানশাইন কর্তৃপক্ষ তিন যুগে পদার্পণের ব্যাজ ও টি-শার্ট দিয়ে বরণ করে নেন।
এরপর সানশাইনের নিজস্ব কার্যালয় থেকে সকলকে নিয়ে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এই র‌্যালিটি নগরীর প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত শাহ্ ডাইনে এসে শেষ হয়।
এ সময় রঙিন বেলুন উড়িয়ে তিন যুগে পদার্পণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন দেশবরেণ্য সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মনজুরুল আহসান বুলবুল। এরপর শাহ্ ডাইনের কনভেনশন হলের মূল ফটকে আমন্ত্রিত সকলকে ফুলের তোরা ও রোববার সানশাইনে প্রকাশিত পত্রিকার কপি দিয়ে বরণ করে নেন সংশ্লিষ্টরা।
দৈনিক সানশাইনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক মো. ইউনুস আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
সভার শুরুতে অগ্নিঝরা এই মাসের ২৫ মার্চের কালোরাতে সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর সানশাইনের সকল প্রতিনিধি ও কলাকৌশলীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় পরিচিতি পর্ব। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আগত সানশাইনের প্রতিনিধিরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অনুভূতি ব্যক্তকালে দৈনিক সানশাইন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনলাইনে আরও বেশি সক্রিয় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আলোচনা সভায় অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, একটি স্থানীয় পত্রিকা ৩৬ বছর যাবত প্রচারিত হচ্ছে এটি সংবাদ পত্রের জগতে একটি বড় ঘটনা। আজ থেকে ৩৬ বছর আগে সানশাইনের সম্পাদক কি স্বপ্ন নিয়ে এই পত্রিকার যাত্রা শুরু করেছিলেন, বর্তমান সময়ে সেটা কি পর্যায়ে গিয়েছে, ঠিক জায়গায় যাচ্ছে কিনা মূলত সেটাই আজকে দেখতে এসেছি। বর্তমানে সংবাদপত্রগুলো নানা সংকটের মধ্যে রয়েছে। কাগজ কালি ছাড়াও আরও নানা ধরনের সংকট রয়েছে। সবথেকে বড় সংকট হলো সংবাদপত্রে মানুষ বিশ^াস করছে না।
তিনি বলেন, সাংবাদিকতা রাজশাহীতে হতে পারে, বরিশালে হতে পারে, দেশের আরও অন্যান্য জায়গায় হতে পারে। কিন্ত সাংবাদিকতা হল একটি বিশ^মানের পেশা। হতে পারে একজন সাংবাদিক আঞ্চলিক একটি এলাকায় কাজ করে, কিন্ত কাজটি করতে হবে বিশ^মানের। এটিই হলো সাংবাকিতা বেঁচে থাকার একমাত্র শর্ত। গত ৩৬ বছরে সানশাইনের অফিস যেমন ছোট থেকে বড় হয়েছে সেটা যেমন দেখা হচ্ছে। তার সঙ্গে দেখতে হবে সানশাইন এই অঞ্চলে ভালো সাংবাদিকতার চর্চা করছে কিনা। সানশাইনের সবাই ভালো সাংবাদিকতা করবে সেটা আশা করি না। কারণ সাংবাদিকতা হল একটি কঠিন পেশা।
দেশবরেণ্য এই সাংবাদিক বলেন, সংবাদ লেখার মধ্যে একজন সাংবাদিককে সৎ থাকতে হবে। পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে সৎ থাকতে হবে। যদিও সততার মধ্যে আবার কিছু মীমাংসিত সত্য ও অমীমাংসিত সত্য রয়েছে। আমি কোনো দলের পক্ষে লিখতে বলি না। আমি বাংলাদেশের পক্ষে লিখতে বলি। কেউ বাংলাদেশের সাংবাদিকতা করবে আর বঙ্গবন্ধুকে অপমান করবে, এই সাংবাদিকতা বাংলাদেশে চলবে না। এটা বাংলাদেশ। নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। কেউ এই ইতিহাসকে বিকৃত করবে এটা সাংবাদিকতার কাজ না। সাংবাদিকরা কারোর ভুল থাকলে, অন্যায়, দুর্নীতি থাকলে সেটা যেমন তুলে ধরবে, তেমনি কারোর উন্নয়নমূলক কাজ থাকলে সেটিও তুলে ধরবে।
আলোচনা সভা চলাকালে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, রাজশাহী একটি পিছিয়ে পরা জনপদ। নানা কারণে এটি পিছিয়ে পরেছে। সানশাইন চেষ্টা করেছে এই বিষয়টিকে বারবার তুলে নিয়ে আসার জন্য। তবে উর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ সেভাবে করা যায়নি। সানশাইন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিভিন্ন কথা তুলে ধরে।
তিনি বলেন, রাজশাহীতে দশ লক্ষ মানুষের বসবাস। আমরা রাজশাহীকে শিক্ষানগরী বলি, এখানে অনেক পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে কষ্টের বিষয় হল, রাজশাহীতে সংবাদপত্র পাঠকের সংখ্যা খুবই কম। আমরা এবিষয়ে চেষ্টা করেছি কিন্তু সেটার ব্যাপকতা সেভাবে বাড়েনি। আমি সকলকে সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস তৈরি করার জন্য অনুরোধ করছি। এসময় তিনি সানশাইন আরও দীর্ঘদিন তার কার্যক্রম চলমান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আলোচনা সভা শেষে আমন্ত্রিত অতিথির সামনে মঞ্চায়িত হয় রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষায় ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা। গম্ভীরায় দৈনিক সানশাইনের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ৩৬ বছরে আসা এবং করোনার সংকটের মাঝে সংবাদ প্রকাশের কার্যক্রম চলমান রাখাসহ রাজশাহীর উন্নয়নগুলো এই পত্রিকায় তুলে ধরার বিষয়গুলো কথা ও গানের সুরে সুরে তুলে ধরা হয়।
দৈনিক সানশাইনের বার্তা সম্পাদক মামুন-অর-রশিদ ও যুগ্ম বার্তা সম্পাদক বদরুল হাসান লিটনের যৌথ সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর হবিবুর রহমান, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) রফিকুল আলম, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, জেলা কৃষক লীগ সভাপতি তাজবুল ইসলাম, ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহতাব হোসেন চৌধুরী, বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ প্রমূখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সানশাইনের নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম ও বাণিজ্যিক প্রধান আবু তাহের খোকন।
অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ রিপন, সানশাইনের মহাব্যবস্থাপক নূরুল হক, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জিএম অসিম কুমার তালুকদার, জনতা ব্যাংকের জিএম আব্দুল রাজ্জাক, কাঁকন পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান খান, মুন্ডুমালার পৌরসভার মেয়র সাইদুর রহমান, রাসিকের ১৯ নং ওয়ার্ড তৌহিদুল হক সুমন প্রমুখ। এছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ও পত্রিকাটির জেলা, উপজেলা পর্যায়ের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top