যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতে এগিয়ে বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতে অনেক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে যখন নির্বাচন হয়, সেটি স্থানীয় সরকার, মেয়র বা জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেটিই হোক, তখন সব প্রার্থীর ট্যাক্স বা আয়করের ফাইল জমা দিতে হয়। অথচ ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষ করেও এখনো ট্যাক্স বা আয়করের ফাইল জমাদান সম্পন্ন করেননি। সুতরাং এ ধরনের স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও এগিয়ে আছি। আমাদের দেশে কেউ এটা ফাইল না করে পারেন না।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে ‘এনআইএমসি মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গৃহীত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত ব্রিটিশ কাউন্সিলের ‘প্ল্যাটফর্ম ফর ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের ১৫০ জন সাংবাদিককে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট প্রশিক্ষণ দেয়। সেখান থেকে নির্বাচিত ১০ জনের হাতে তাদের প্রতিবেদনের জন্য ‘এনআইএমসি মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ স্মারক তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী।
পদকপ্রাপ্তরা হলেন, ভিডিও ক্যাটাগরিতে নেক্সাস টিভির সহকারী প্রযোজক মো. তাশহাদুল ইসলাম তারেক, বিটিভির নাটোর জেলা প্রতিনিধি মো. জালাল উদ্দিন, প্রিন্ট ক্যাটাগরিতে আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার আয়নাল হোসেন, বিটিভির নিউজরুম এডিটর শরীফা সুলতানা, আজকের পত্রিকার রাজশাহী নিজস্ব প্রতিবেদক মো. রিমন রহমান, বণিক বার্তার রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী ফেরদৌস সিদ্দিকী, দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের স্টাফ রিপোর্টার হোসাইন মো. সজিবুর রহমান, অডিও ক্যাটাগরিতে রেডিও পল্লীকন্ঠ মৌলভীবাজারের প্রোগ্রাম প্রোডিউসার ফাতেমা আক্তার রমি, বাংলাদেশ বেতার সিলেটের উপআঞ্চলিক পরিচালক পবিত্র কুমার দাশ ও রেডিও পদ্মার রিপোর্টার আনিকা তামান্না।
জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহিন ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে যুগ্ম সচিব আয়েশা আক্তার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এটাশে ফানি ফারমাকি, ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টম মিসিওসিয়া এবং ‘প্ল্যাটফর্ম ফর ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পের টিম লিডার আরসেন স্টেপনিয়ান বক্তব্য রাখেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার সুশাসনের ওপর জোর দিচ্ছে বলেই মানুষকে জানাচ্ছে সরকারের দপ্তরে কীভাবে এবং কী কী সুবিধা মানুষ পেতে পারে। অনেক কিছু সম্পর্কে মানুষ জানে না। যেমন- তথ্য অধিকার আইন অনেক সাধারণ মানুষ জানে না। এমনকি অনেক সাংবাদিকও ভালো মতো জানেন না।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর এ আইন সংসদে পাস হয় এবং সে আইন বলে তথ্য কমিশন গঠিত হয়। তথ্য কমিশন গঠিত হওয়ার পর এ পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
‘কোনো দপ্তরে গিয়ে ফাইলের পাতা চুরি করার প্রয়োজন নেই বা কাউকে ম্যানেজ করে তথ্য জানার দরকার নাই’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, অনেকে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো দপ্তরে গিয়ে তথ্য না পেয়ে তথ্য কমিশনের মাধ্যমে আবেদন করেছেন এবং কমিশন তা নিষ্পত্তি করেছে। এ রকম বহু নজির আছে। কিন্তু আইন না জানার ফলে তথ্য চুরি করার চেষ্টা হয়। সরকারি অফিসে পিয়ন, দারোয়ান বা যে ফাইলের ফটোকপি করে তার কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়। সেজন্য তাদের ম্যানেজ করা হয় এবং তারা ম্যানেজ হয়ে দিয়েও দেয়। যা সমীচীন নয়।
তিনি বলেন, এখন এগুলোর প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কারণ, আমাদের তথ্য অধিকার আইন আছে। তথ্য অধিকার আইনেও যদি আপনি প্রয়োজনীয় তথ্য না পান তাহলে আদালত রয়েছে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিশ্বের প্রতিটি দেশেরই কিছু রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা থাকে, যা প্রকাশযোগ্য নয়। সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলুন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলুন, যুক্তরাজ্য বলুন, সবদেশেই। কিন্তু আমাদের দেশে একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, সবকিছু ‘পাবলিক’ হতে হবে, যা ঠিক নয়, মানুষকে এটিও জানাতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সরকার সবকিছুতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করেছে। আজ থেকে ১২-১৪ বছর আগে কোনো জায়গায় টেন্ডার ফেললে সেই টেন্ডার বক্স ছিনতাই, মারামারি, গোলাগুলি, হহাহত হওয়া ছিলো নিয়মিত ঘটনা। এখন সবকিছু অনলাইন, ই-টেন্ডারে হয়। ই-টেন্ডারিং একটা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছে।
এ সময় ই-ফাইলের পাশাপাশি কাগজের ফাইলও দরকার উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, ই-ফাইলিং অবশ্যই আমাদের কাজে গতি এনেছে। আমি বিদেশে বসে ই-ফাইল সই করি এবং প্লেনে বসে ফাইল সই করেছি এমনও হয়েছে। কিন্তু সংরক্ষণের জন্য কাগজের ফাইলও দরকার আছে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য