রাজশাহী অঞ্চলে স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিত্ব
প্রাপ্তি প্রসঙ্গ ডেস্ক। ।
দেশ ও জাতির কল্যাণে নিরলসভাবে যুগে যুগে কাজ করে গেছেন পদ্মা-যমুনা বিধৌত রাজশাহী অঞ্চলের কিছু মানুষ। নিজেদের কর্ম তাদের আজো অমর করে রেখেছেন। রাজশাহী অঞ্চলের বিখ্যাত কিছু মানুষের পরিচিতি।
রাজশাহী বিভাগ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। রাজশাহী আটটি জেলা, ৬৬টি উপজেলা, ৫৯টি পৌরসভার এবং ৫৬৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা এবং সিরাজগঞ্জ রাজশাহী বিভাগের চারটি প্রধান ব্যবসায়ীক এলাকা এবং বড় শহর।
রাজশাহী বহু বিখ্যাত লোকের জন্মস্থান। আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জিয়াউর রহমান, কুমার শরৎকুমার রায়ের মতো বহু বিখ্যাত লোকের জন্মস্থান এ শহর।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (১২ ডিসেম্বর ১৮৮০ – ১৭ নভেম্বর ১৯৭৬)
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন বিংশশতকী ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম তৃণমূল রাজনীতিবিদ ও গণআন্দোলনের নায়ক, যিনি জীবদ্দশায় ১৯৪৭-এ সৃষ্ট পাকিস্তান ও ১৯৭১-এ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে “মজলুম জননেতা” হিসাবে সমধিক পরিচিত।
১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনকারী প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়ও তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি মাওপন্থী কম্যুনিস্ট, তথা বামধারার রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার অনুসারীদের অনেকে এজন্য তাকে “লাল মওলানা” নামেও ডাকতেন।
তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা এবং পঞ্চাশের দশকেই নিশ্চিত হয়েছিলেন যে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ একটি অচল রাষ্ট্রকাঠামো। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের কাগমারী সম্মেলনে তিনি পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকদের ‘ওয়ালাকুমুসসালাম’ বলে সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার ঐতিহাসিক ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া পল্লীতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা হাজী শারাফত আলী। হাজী শারাফত আলী ও বেগম শারাফত আলীর পরিবারে ৪ টি সন্তানের জন্ম হয়। একটি মেয়ে ও তিনটি ছেলে। মোঃ আব্দুল হামিদ খান সবার ছোট। তার ডাক নাম ছিল চেগা মিয়া। ছেলে-মেয়ে বেশ ছোট থাকা অবস্থায় হাজী শারাফত আলী মারা যান। কিছুদিন পর এক মহামারীতে বেগম শারাফত ও দুই ছেলে মারা যায়। বেঁচে থাকেন ছোট শিশু আব্দুল হামিদ খান।
১৯২৯-এ আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। এখান থেকে তার নাম রাখা হয় “ভাসানীর মাওলানা”। এরপর থেকে তার নামের শেষে ভাসানী শব্দ যুক্ত হয়।
মোঃ মনসুর আলী (১৬ জানুয়ারি ১৯১৯ – ৩ নভেম্বর ১৯৭৫)
একজন আইনজীবি, রাজনৈতিক এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন ক্যাপ্টেন ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গঠিত বাংলাদেশ সরকারে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলহত্যার ফলে নিহত চার জাতীয় নেতার মধ্যে তিনিও একজন। তার পুত্র মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা এবং ১৯৯৬-২০০১ সময়কালে বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের ‘কুড়িপাড়া’য় ১৯১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি । বাবার নাম হরফ আলী সরকার। পড়াশোনা শুরু করেন কাজিপুরের গান্ধাইল হাই স্কুলে৷ এরপর চলে আসেন সিরাজগঞ্জ বি.এল. হাইস্কুলে৷ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এখান থেকেই৷ এরপর চলে যান পাবনা৷ ভর্তি হন এডওয়ার্ড কলেজে৷ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন এই কলেজ থেকে৷ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ১৯৪১ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন ৷
এরপর ভর্তি হন আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে৷ ১৯৪৫ সালে এখান থেকেই অর্থনীতিতে এম.এ এবং ‘ল’ পাস করেন৷ এল.এল.বি- তে প্রথম শ্রেণী লাভ তিনি।[১][২] ১৯৫১ সালে আইন ব্যবসা শুরু করেন পাবনা জেলা আদালতে৷ আইনজীবী হিসেবে তিনি ছিলেন একজন সফল ব্যক্তি৷ পাবনা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতিও ছিলেন তিনি।
আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান (২৬ জুন ১৯২৬ – ৩ নভেম্বর ১৯৭৫)
বাংলাদেশের প্রথম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গঠিত অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। একজন নির্লোভ, সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতা হিসেবে তার পরিচিতি ছিল।
বর্তমান নাটোর জেলার অন্তর্গত বাগাতিপাড়ার মালঞ্চী রেলস্টেশন সংলগ্ন নূরপুর গ্রামে মামার বাড়িতে ১৯২৬ সালের ২৬ জুন তারিখে এ এইচ এম কামারুজ্জামান জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার পৈতৃক বাড়ি ছিল রাজশাহী জেলার কাদিরগঞ্জ মহল্লায়। তিনি বনেদি জমিদার পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার পিতা আবদুল হামিদ ও মাতা বেগম জেবুন্নিসা। তার ১২ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম। তার ডাকণাম ছিল হেনা।
জিয়াউর রহমান (১৯ জানুয়ারি ১৯৩৬[১] – ৩০ মে ১৯৮১)
জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনাপ্রধান এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তান বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালি জনগনের উপর হামলা করার পর তিনি তার পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে বিদ্রোহ করেন এবং স্বশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
পরে ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ তিনি শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করে।
মুক্তিযুদ্ধের পর জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন[২] এবং ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি চার বছর বাংলাদেশ শাসন করার পর ১৯৮১ সালের ৩০শে মে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে নিহত হন।
জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশের বগুড়া জেলার বাগবাড়ী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। জন্ম ও শৈশবে তার ডাক নাম ছিলো কমল। তার পিতার নাম ছিল মনসুর রহমান এবং মাতার নাম ছিল জাহানারা খাতুন ওরফে রানী। পাঁচ ভাইদের মধ্যে জিয়াউর রহমান ছিলেন দ্বিতীয়।
কুমার শরৎকুমার রায় (জন্ম: ১৮৭৬ – মৃত্যু: ১২ এপ্রিল, ১৯৪৬)
কুমার শরৎ কুমার রায় ব্রিটিশ ভারতের রাজশাহী অঞ্চলের একজন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব এবং বরেন্দ্র অঞ্চল সম্পর্কিত গবেষণার প্রাথমিক যুগের অন্যতম উদ্যোক্তা। কুমার শরৎ কুমার রায় ১৮৭৬ খ্রিটাব্দে নাটোর জেলার দিঘাপতিয়ার রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম: প্রমথ নাথ রায় এবং মাতা: দ্রবময়ী।
অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় (১ মার্চ ১৮৬১ – ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০)
অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় হলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি ইতিহাসবেত্তা ও সমাজকর্মী। তিনি বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার তৎকালীন নেতৃস্থানীয় আইনজীবী ছিলেন। মানবিক জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায়, বিশেষ করে ইতিহাস, সাহিত্য, ভাষা, সংস্কৃতি. চিত্রকলা এবং প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে তার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। ধারণা করা হয় তার বিচক্ষণতায় প্রভাবিত হয়েই শরৎকুমার রায় বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটি এবং বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
মৈত্রেয় বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার গৌরনাইয়ের বরেন্দ্র বর্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার (বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার) নওয়াপাড়া থানার শিমুলিয়া গ্রামে মায়ের মামার বাড়িতে তার জন্ম। তার পড়াশোনায় হাতেখড়ি ঘটে হরিনাথ মজুমদারের কাছে; কুমারখালীর একজন আদর্শ শিক্ষক হরিনাথ মজুমদার কাঙ্গাল হরিনাথ নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। দশ বছর বয়সে মৈত্রেয় রাজশাহীতে তার বাবার কাছে চলে যান। বাবা মথুরানাথ মৈত্রেয় রাজশাহীতে ওকালতি করতেন।
স্যার যদুনাথ সরকার (ডিসেম্বর ১০, ১৮৭০ – মে ১৯, ১৯৫৮)
যদুনাথ সরকার স্বনামধন্য বাঙালি ইতিহাসবিদ। তিনিই প্রথম মীর্জা নাথান রচিত বাহারিস্তান-ই-গায়বী এর পাণ্ডুলিপি ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত জাতীয় গ্রন্থাগারে খুঁজে পান এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন জার্নালে বাংলা এবং ইংরেজিতে প্রবন্ধ লিখে বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
যদুনাথ সরকারের জন্ম ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর, বৃহত্তর রাজশাহী জেলার আত্রাই থানার (বর্তমান নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার ছাতারদিঘী ইউনিয়ন) কড়চমারিয়া গ্রামে৷ পিতা রাজকুমার সরকার এবং মাতা হরিসুন্দরী দেবীর ৭ পুত্র এবং ৩ কন্যার মধ্যে তিনি ৫ম সন্তান, ৩য় পুত্র। তাদের পূর্বপুরুষ ধনাঢ্য জমিদার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। বিদ্যানুরাগী রাজকুমার সরকারের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ছিল বিশালাকার। গণিতের ছাত্র হলেও ইতিহাসে ছিল গভীর আগ্রহ। নানা জনহিতকর কাজে তিনি সময় ও অর্থ ব্যয় করতে ভালোবাসতেন। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এই বিষয়াদি যদুনাথ সরকারকে প্রভাবান্বিত করেছিল।
রমাপ্রসাদ চন্দ (১৫ আগস্ট ১৮৭৩ – ২৮ মে ১৯৪২)
রমাপ্রসাদ চন্দ ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি ইতিহাসবিদ এবং পুরাতত্ত্ববিদ। তিনি ১৯১০ সালে রাজশাহী অঞ্চলের অপর দুই পুরাকীর্তি ও বিদ্যাত্সাহী ব্যক্তি শরৎ কুমার রায় এবং অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়-এর সাথে একত্রে প্রতিষ্ঠা করেন বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি এবং পরবর্তীতে ১৯১৯ সালে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর।
রমাপ্রসাদের জন্ম ১৮৭৩ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলার ইতিহাস প্রশিদ্ধ বিক্রমপুর পরগণার শ্রীধরখোলা গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে।
ডক্টর রাধাগোবিন্দ বসাক (৮ জানুয়ারি ১৮৮৫ – ১০ ডিসেম্বর ১৯৮২)
রাধাগোবিন্দ বসাক ছিলেন প্রখ্যাত বাঙালি ইতিহাসবিদ ও ভাষা-বিজ্ঞানী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন যেসকল ব্যক্তি এখানে যোগদান করেন তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম; তিনি এবং ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের লেকচারার হিসেবে যোগ দান করেন।
মৌলবী শামসুদ্দীন আহমদ
উপমহাদেশের প্রথম বাঙালি মুসলমান খ্যাতিমান প্রত্নকলাবিদ ও ঐতিহাসিক শামসুদ্দীন আহমেদের জন্ম ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার দেওয়ানপাড়া গ্রামে।
মুখলেসুর রহমান
নিরলস জ্ঞান-সাধক অধ্যাপক মুখলেসুর রহমানের জন্ম ১৯২৪ সালের ১লা ফ্রেব্রুয়ারি তারিখে বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দের মুগবেলাই গ্রামে।
নরোত্তম দাস ঠাকুর
নরত্তোম দাস ঠাকুর (আনুমানকি ১৪৬৬; মৃত্যু ১৫৩১), এছাড়াও ঠাকুর মহাশয় নামে পরিচিত, ছিলেন একজন গৌড়ীয় বৈষ্ণব সন্ত, যিনি ওড়িশা ও ভারতের বঙ্গে বৈষ্ণব ভক্তি প্রচার করেছিলেন।
তিনি ছিলেন রাজা কৃষ্ণানন্দ দত্ত ও নারায়নি দেবীর পুত্র, এবং মুঘল সাম্রাজ্যের (বর্তমান বাংলাদেশ) রাজশাহী জেলার গোপালপুর পরগনায় বেড়ে ওঠেন। ১৫৩১ বঙ্গাব্দ মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে বর্তমান খেতুরি ধামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা বিশাল ভূসম্পত্তিরর মালিক ছিলেন কিন্তু, পিতার এই বিশাল সম্পত্তির প্রতি তার বিন্দু মাত্র লোভ ছিলনা। তার পিতা জাতে কায়স্থ ছিল, সে হিসেবে তিনি কায়স্থের সন্তান,মাত্র ১৬ বছর বয়সে পিতার এই অগাধ সম্পত্তি ত্যাগ করে চলে যান বিন্দাবনে। তার পিতার ইচ্ছা ছিল নরোত্তম সংসারী হইয়া জীবন যাপন করিবে। কিন্তু সংসারে প্রতি তার বিন্দুমাত্র টান ছিলনা।
বাল্যকালের কিছু সময় নিজ গ্রাম গোপালপুরে অতিবাহিত করার পর বৈষ্ণব মন্ত্রে দীক্ষালাভ করার জন্য ভারতের অন্যতম তীর্থস্হান বৃন্দাবনে গমন করেন এবং বৈষ্ণবকূল শিরমনি লোকনাথ গোস্বামীর নিকট বৈষ্ণব মন্ত্রে দীক্ষালাভ করেন।
কবি শুকুর মাহমুদ
কবি শুকুর মাহমুদ ছিলেন মধ্যযুগের বাংলার নাথ সাহিত্য ধারার সম্ভবত শেষ কবি। কবি শুকুর মাহমুদের জন্ম সাল ১৬৬০ কিংবা তারও কিছু পূর্বে। রাজশাহী শহরের অনতিদূরে সিন্দুর কুসুমী গ্রামে কবির বাস্তুভিটার নির্দশন আজও বিদ্যমান।
কৃষ্ণচন্দ্র রায় (১৭১০ – ১৭৮২)
কৃষ্ণচন্দ্র রায় ছিলেন নদিয়ার মহারাজা।[১] বাংলা সাহিত্য, বাংলার সংস্কৃতি ও বাঙালি হিন্দুসমাজের ইতিহাসে তাঁর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। নদিয়া রাজপরিবারের শ্রেষ্ঠ পুরুষ হিসেবে পরিগণিত। তিনি বিদ্বান, সংস্কৃত ও ফার্সি ভাষায় শিক্ষিত, সংগীতরসিক ছিলেন। তীব্র রক্ষণশীল রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন শাক্তপদাবলিকার রামপ্রসাদ সেন, অন্নদামঙ্গল কাব্য প্রণেতা ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর, হাস্যরসিক গোপাল ভাঁড় প্রমুখ বাংলার প্রবাদপ্রতিম গুণী ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষক। অন্নদামঙ্গল কাব্য তারই রাজসভার ফরমাসে রচিত হয়। কৃষ্ণনগরের জগদ্বিখ্যাত মৃৎশিল্পের সূত্রপাত তার সময়ে তারই উদ্যোগে ঘটে।
কৃষ্ণচন্দ্র রায় ছিলেন একজন কূটকৌশলী ব্যক্তি। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হলে তিনি ইংরেজদের পক্ষ অবলম্বন করেন। পরবর্তি নবাব মীর কাশিমের সময় তাকে বন্দী করা হয়। ইংরেজদের হস্তক্ষেপে তিনি মুক্তি লাভ করেন। কোম্পানি সরকার তার আনুগত্যের জন্য মহাজারা উপাধিতে ভূষিত করেন।
বঙ্কিম চন্দ্রের সমকালীন রাজা কৃষ্ণেন্দ্র রায় উত্তরবঙ্গের সাহিত্য সাধকদের মধ্যে ছিলেন প্রতিভাধর সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব। রাজা কৃষ্ণেন্দ্র রায় জন্মগ্রহণ করেন ১৮৪৮ সালে বর্তমান নাটোর জেলার খাজুরা গ্রামে এক বিখ্যাত বরেন্দ্রী ব্রাহ্মণ পরিবারে।
জগদিন্দ্রনাথ রায়
নাটোরের মহারাজা হিসেবে পরিচিত মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ রায় বাহাদুর (১৮৬৮-১৯২৫) বাংলার নাটোরের জমিদার ছিলেন । তিনি ব্রিটিশ ভারতে ক্রিকেট খেলার জন্য তার অবদানের জন্যও উল্লেখ হয়েছেন।
তিনি গোবিন্দ চন্দ্র নাথ রায়ের দত্তক পুত্র ছিলেন, নাটোরের জমিদার, রাজশাহী রাজ পরিবারের একজন সদস্য, যিনি নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান এবং তার বিধবা পনের বছর বয়সে জগদন্দ্রকে দত্তক গ্রহণ করেন। ১৮৭৭ সালে মহারাজা ব্যক্তিগত খেতাব লাভ করেন। পরে তিনি কলকাতায় তার বাড়ি বানিয়ে দেন। নাটোর রাজবাড়ী , নাটোর রাজ পরিবারের পূর্বপুরুষের বাড়ি যা রাণী ভবানীর সময়ে তৈরি। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের একটি সুরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভ । তিনি ১৯২৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন তার পুত্র রাজা জগন্নাথ রায় বেঁচে ছিলেন, যিনি পরে নাটোর রাজে তার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
রজনীকান্ত সেন (২৬ জুলাই, ১৮৬৫ – ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১০)
রজনীকান্ত সেন প্রখ্যাত কবি, গীতিকার এবং সুরকার হিসেবে বাঙালি শিক্ষা-সংস্কৃতিতে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সমসাময়িক এই গীতিকারের গানগুলো খুবই জনপ্রিয়। ঈশ্বরের আরাধনায় ভক্তিমূলক ও দেশের প্রতি গভীর মমত্ববোধ বা স্বদেশ প্রেমই তার গানের প্রধান বৈশিষ্ট্য ও উপজীব্য বিষয়।
রজনীকান্তের শেষ দিনগুলো ছিল অসম্ভব ব্যথায় পরিপূর্ণ। তিনি ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১০ সালে (১৩১৭ বঙ্গাব্দের ২৮শে ভাদ্র) মঙ্গলবার রাত্রি সাড়ে আট ঘটিকার সময় লোকান্তরিত হন।
মির্জা মোহাম্মদ ইউসফ আলী
মির্জা মোহাম্মদ ইউসফ আলী ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর থানার আলিয়াবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
মহারাণী ভবাণী (১৭১৬ – ১৭৯৫)
রাণী ভবানী ইংরেজ শাসনামলে বর্তমান বাংলাদেশের নাটোরের একজন জমিদার ছিলেন। তাঁর পিতা আত্মারাম চৌধুরী এবং মাতা জয়দূর্গা৷ দান, ধ্যান, শিক্ষা, পানীয় জলের ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, চিকিৎসা ও ধর্মীয় কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁর প্রজারা তাঁকে ‘মহারাণী’ নামে আখ্যায়িত করে।
বগুড়া জেলার তৎকালীন আদমদিঘী থানাধীন ছাতিয়ান নামক গ্রামে রানী ভবানী জন্মগ্রহণ করেন। খুব অল্প বয়সেই তৎকালীন নাটোরের জমিদার রাজা রামকান্তের সাথে রানী ভবানীর বিয়ে হয়।
১১৫৩ বঙ্গাব্দে রাণী ভবাণীর স্বামী রামকান্ত ইহলোক ত্যাগ করার পর অধিকারবলে রাণী ভবাণী স্বামীর জমিদারী প্রাপ্ত হন। তখনকার দিনে জমিদার হিসাবে একজন মহিলা অত্যন্ত বিরল ছিলেন, কিন্তু রাণী ভবাণী রাজশাহীর বিশাল জমিদার কার্য অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নির্বাহ করেন।
রাণী ভবানী ১৮০২ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর ৭৯ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।
হেমন্ত কুমারী দেবী
মহারাণী হেমন্ত কুমারী দেবী ১২৭৬ বাংলা সনে মানিকগঞ্জ জেলার ধুল্লা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রাজশাহী শহরের উন্নয়নের সাথে তিনি বিশেষভাবে স্মরনীয় হয়ে আছেন। জনকল্যাণকর কাজের জন্য হেমন্ত কুমারী মহারাণী খেতাব পেয়েছেন ৷ তিনি শেষ জীবনে কাশীতে অবস্থানকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং অবশেষে ১৩৪৯ বঙ্গাব্দের ২৭ আষাঢ় মৃত্যুবরণ করেন৷
পুঠিয়ার জমিদার মহারাণী শরৎ সুন্দরী দেবীর পুত্র যতীন্দ্র নারায়ণ ১৮৮০ সালে ঢাকা জেলার বিশিষ্ট জমিদার ভুবনমোহন রায়ের মেয়ে হেমন্ত কুমারী দেবীকে বিয়ে করেন। অসৎ সঙ্গের কারণে কুমারের শরীরে নানা রোগ দানা বাঁধে। অবশেষে ১৮৮৩ সালে তিনি মারা যান।
এদিকে জীবনের শেষ সময় মহারাণী হেমন্ত কুমারী দেবীর শাশুড়ি মহারাণী শরৎ সুন্দরী নানা সমস্যায় তিক্ত হয়ে ভারতের কাশীতে চলে যান। ১৮৮৬ সালে তিনি মারা যান। এরপরে হেমন্ত কুমারী দেবী মাত্র ১৮ বছর বয়সে পুঠিয়া জমিদারীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
মহারাণী হেমন্ত কুমারীর জমিদারী আমলে বহু শিক্ষার্থী, বহু বিধবা, এবং বহু অনাথ তার কাছ থেকে নিয়মিত মাসিক মাসোহারা পেত৷[৩] রাজশাহী শহরে তিনি একটি ছাত্রাবাস যা বর্তমানে রাজশাহী কলেজের অধীনে মহারাণী হেমন্ত কুমারী হিন্দু ছাত্রাবাস সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
তার সমাজকল্যাণ মূলক কার্যক্রমের মধ্যে হেমন্ত কুমারী ওয়াটার ওয়ার্কস, হেমন্ত কুমারী সংস্কৃত কলেজ, নওগাঁ দাতব্য চিকিৎসালয়ে বার্ষিক দান, ভাগিরথিতে স্নানঘাট নির্মাণের সহায়তা, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন স্মুতি তহবিলে দান, নান্দিনা (ময়মনসিংহ) ডাকঘর গৃহ নির্মাণ, পূরীধামের অনাথ আশ্রম ও হেমন্ত নাথের মন্দিরে দান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য৷
প্রমথনাথ রায়
রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে রায় বাহাদুর প্রমথনাথ রায় ছিলেন অন্যতম। তিনি ১৮৪৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
শরৎসুন্দরী দেবী
মহারাণী শরৎসুন্দরী দেবী ১২৫৬ বঙ্গাব্দের ২০ আশ্বিন পুঠিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। সমকালীন সমাজরীতি অনুযায়ী অতি অল্প বয়সে শরৎসুন্দরীর বিয়ে হয় পুঠিয়া রাজবংশের ‘পাঁচআনি’ শাখার বড় তরফের রাজা যোগেন্দ্রনারায়ণ এর সাথে। শরৎসুন্দরী ছিলেন ভিন্নধর্মী জমিদার।
বাংলাদেশের ইতিহাস, সাহ্যি ও জনশ্রুতিতে বাংলার জমিদারবর্গ অত্যাচারী, প্রজাপীড়ক, শোষক হিসেবেই চিত্রিত। কিন্তু এদের মধ্যে দু’চারজন ব্যতিক্রমধর্মী প্রজাদরদী জমিদারদের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায়। শরৎসুন্দরী তাদেরই একজন।
রাজা হরনাথ রায় চৌধুরী
রাজা হরনাথ রায় চৌধুরী তাঁর বিভিন্ন জনহিতকর কাজের জন্য দুবলহাটি জমিদারদের মধ্যে বিখ্যাত হয়ে আছেন। বর্তমার রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুর, ফরিদপুর ও সিলেট জেলায় তাঁর সময়কার জমিদারী বিস্তৃত ছিল।
দুবলহাটি জমিদারি বৃহত্তর রাজশাহী জেলার জমিদার পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন। ১৮৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে তাঁর জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৮৭৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে রাজা এবং ১৮৭৭ সালে রাজা বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করে।
রাজা হরনাথ রায় চৌধুরী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন না। কিন্তু শিক্ষার প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ ছিল। রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষাবিস্তারে তাঁর অবদান অনেক। তিনি ১৮৬৪ সালে দুবলহাটিতে একটি অবৈতনিক নিম্ন মাধ্যমিক ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৮৭৩ সালে তদানীন্তন রাজশাহী জেলা স্কুলকে রাজশাহী কলেজে উন্নীত করার জন্য বার্ষিক ৫০০০ টাকা আয়ের সম্পত্তি দান করেন।
উক্ত সম্পত্তির মূল্য তখন ছিল প্রায় এক লক্ষ টাকা। তিনি দুবলহাটিতে একটি অতিথিশালা খুলেছিলেন। রাজা হরনাথ রায় চৌধুরী ১৮৯১ মৃত্যুবরণ করেন।
খান বাহাদুর এমাদউদ্দীন আহমদ (১৮৭৫-১৯৩৬)
খান বাহাদুর এমাদউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের একজন বরেণ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ১৯২২ সালে তিনি খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।
এমাদউদ্দীন আহমদ রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রাজারামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এমাদউদ্দীন আহমদ রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে এনট্রান্স পাস করেন। তিনি এফ.এ পাস করেন রাজশাহী কলেজ থেকে।[২] রাজশাহী কলেজ থেকেই তিনি বি.এ ডিগ্রি লাভ করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এল ডিগ্রি লাভ করেন।[৩] কর্ম জীবনের শুরুতে তিনি রাজশাহী জজকোর্টে আইন ব্যবসায় যোগদান করেন।
১৯২২ সালে তাকে তার কর্মদক্ষতা এবং ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ খানবাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৩৬ সালের ৭ মে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷
আশরাফ আলী খান চৌধুরী
আশরাফ আলী খান চৌধুরী ছিলেন একজন বাঙালি আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ। আশরাফ আলী খান চৌধুরী ১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ ভারত, বাঙালি প্রেসিডেন্সির নাটোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা খান বাহাদুর এরশাদ আলী খান চৌধুরী, বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য এবং তার মা মাসিরুননেসা খানম ছিলেন। তিনি ইংল্যান্ডে আইন অধ্যয়ন করেন এবং ১৯১২ সালে ব্যারিস্টার হন।
কলকাতা হাই কোর্টে যোগ দিয়ে আশরাফ আলী খান চৌধুরী তার আইনি কর্মজীবন শুরু করেন। তার পিতার রাজনীতিতে তিনি প্রবর্তিত হন এবং সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক কর্মজীবন গড়ে তোলেন। তিনি পূর্ববাংলা ও আসাম প্রাদেশিক মুসলিম শিক্ষা সমিতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছিলেন।
তিনি অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ১৯২৮ সালে তিনি নাটোর জেলার বঙ্গীয় আইন পরিষদের নির্বাচিত হন। ১৯৩২ সালে তাকে কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, কারণ তিনি আইনের উপর রাজনীতির ক্ষেত্রে ক্যারিয়ারকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।
১৯৩৭ সালে তিনি অট ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে নাটোর জেলার বঙ্গীয় আইন পরিষদে পুনরায় নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদের ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪১ সালের ৮ ডিসেম্বর কলকাতার পশ্চিমবঙ্গে ব্রিটিশ ভারতের মৃত্যু হয় চৌধুরী।
কাজী জালাল আহমদ
ধনাঢ্য পরিারের সন্তান কাজী জালাল আহমদ সোনার চামুচ মুখে নিয়ে ভোলাহাট উপজেলায় পহেলা জানুয়ারী ১৯৩০ সালে জন্মগ্রহন করেন। পিতার নাম ডাঃ কাজী আজাহার উদ্দিন। তিনি মালদা জেলা স্কুল হতে ১৯৪৬ সালে মেট্রিক ও ঢাকা বিম্ববিদ্যালয় হতে ১৯৫১ সালে রসায়নে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি পরে পি.এস.সি সম্পন্ন করে পাকিস্তান সরকারের সিভিল সার্ভিস ক্যাডারে ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬০ সালে পাবনার জেলা প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হন।
পরবর্তীকালে তিনি যোগাযোগ সচিব , শিক্ষ সচিবসহ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের চাকুরীর পদ অলংকার করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি সর্বশেষ প্রতিরক্ষা সচিব হয়ে অবসর গ্রহন করেন।
মোহাম্মদ আব্দুল জলিল (২১ জানুয়ারি ১৯৩৯ – ৬ মার্চ ২০১৩)
মোহাম্মদ আব্দুল জলিল ছিলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তন বাণিজ্যমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও ছিলেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন।[৩] ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নওগাঁ-৫ আসন থেকে বিজয়ী হন। ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগ শাসনামলে তিনি কয়েক বছর সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
আব্দুল জলিল ১৯৩৯ সালের ২১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার চকপ্রাণ গ্রামে। তার বাবার নাম ফয়েজউদ্দিন আহমেদ এবং মাতার নাম জারিনা ফায়েজ। বাবা ফয়েজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন ব্যবসায়ী।
স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষা জীবনের শুরু। স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেই তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি নওগাঁ কে. ডি. সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। সেখানে পড়াশুনা শেষে ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। সেখানে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। ১৯৬০ সালে আব্দুল জলিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
এরপর ১৯৬৩ সালে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেন এবং ১৯৬৪ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি আইন বিষয়ে পড়াশুনা করার জন্য লন্ডনে যান। কিন্তু, পড়াশুনা শেষ না করেই ১৯৬৯ সালে তাকে দেশে ফিরে আসতে হয়।
সাম্প্রতিক মন্তব্য