logo
news image

দূর্গম পাহাড়ে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হলো ১০ কিলো মিটার রাস্তা

আলমগীর মানিক, রাঙামাটি।  ।  
সরকারী উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টির বাইরে থাকা দুর্গমাঞ্চলের ১০ গ্রামের বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে সম্পূর্ন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গ্রামীন জঙ্গল ও পাহাড় কেটে নির্মাণ করলো দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার সড়ক পথ। রাঙামাটি জেলার দূর্গম উপজেলা বরকলের ৩নং আইমাছড়া ইউনিয়নের বাসিন্দারা সম্মিলিতভাবে এই রাস্তাটি নির্মাণ করায় গ্রামীণ জীবন ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে ইতিমধ্যেই। এ রাস্তা নির্মাণে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন সংস্থার সাহায্যে সহযোগিতা নেয়নি গ্রামবাসী। সম্পুর্ন পাড়াবাসীদের স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তাটি। রাস্তাটি নির্মানের ফলে গ্রামবাসী ও স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের চলাচলে যেমনি সুবিধে হয়েছে তেমনি  গ্রামের উৎপাদিত পন্য বাজারজাত করা সহজ হয়েছে। এমনকি হাল্কা ও মাঝারী যানবাহন ও চলাচলের সম্ভব হবে বলে জানালেন গ্রামের কার্বারী (গ্রাম প্রধান) জীবন মোহন দেওয়ান ও গ্রামের ষার্টোধ বৃদ্ধ শান্তিময় চাকমা।
উপজেলার ৩নং আইমাছড়া ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের মদন পাড়া, কৃষ্ণ পাড়া সাইচাল পাড়া, দোজরি পাড়া, ভধা পাড়া, দীঘলছড়ি পাড়া, করল্যাছড়ি পাড়া, নোয়া পাড়া, আইমাছড়া মুখপাড়া ও জগন্নাথছড়া সহ ১০ গ্রামের মানুষদের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিল তাদের একটি ভালো রাস্তা হবে। সেই রাস্তা দিয়ে গ্রামের মানুষের চলাচল ও তাদের উৎপাদিত কাঁচা মালামাল সহজে বাজারজাত করতে পারবে। তার জন্য ঐসব এলাকার মানুষ রাস্তা ,ব্রীজ ও কাল ভার্ট নির্মানের জন্য সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ধর্না দিয়েছেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে জানালেন এসব এলাকার মানুষ। তাই সরকারী সাহায্যের আশায় না থেকেই ১০ গ্রামের মানুষদের নিয়ে একটি কমিটি করে প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন প্রতি পরিবার থেকে একজন করে এসে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে মাটি কাঁটা শুরু করে। গত দু মাসের মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মানে সক্ষম হয়েছে গ্রামবাসী। আর বাকী রাস্তাও পর্যায়ক্রমে সমাপ্ত করবে বলে দাবী করছেন গ্রামের মানুষ। রাস্তা নির্মাণ করা হলেও কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় ব্রীজ ও কাল ভার্ট না থাকায় চলাচলে ও মালামাল বহনে সমস্যা হবে বলে জানালেন মাটি কাটা কমিটির সভাপতি কালাচান চাকমা সদস্য দবনা চাকমা ও সোনাধন চাকমা।
এলাকাবাসীরা জানায়- গত দু মাসের আগে ও দূর্গম প্রত্যন্ত গ্রামের রাস্তা গুলো ছিল সরু। উচুঁ নিচু আকাঁ বাঁকা। খানা খন্দে আর ঝোঁপ জঙ্গলে ভরা। একা চলাচল করতে গ্রামের মানুষ ভয় পেতো। মানুষের চলাচলে ও উৎপাদিত মালামাল বহন করা খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। গ্রামের মানুষ উঁচুনিচু আকাঁবাকা পাহাড়ী পথ পাড়ি দিয়ে পায়ে হেটে উপজেলা সদরে  আসা যাওয়া করতো। আজ দশ গ্রামের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে প্রায় দৈর্ঘ্য দশ কিলোমিটার আর প্রস্থ ২০ থেকে ৩০ ফুট কাঁচারাস্তা নির্মাণ করে দূর্গম প্রত্যন্ত বরকল উপজেলায় উদাহরন সৃষ্টি করেছেন। এ রাস্তার কারণে বদলে যাবে দশ গ্রামের মানুষের জীবনধারা। তবে রাস্তাটি হলেও কিছু কিছু জায়গায় সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ব্রীজ ও কালভার্ট  নির্মানের দাবী জানিয়েছেন আইমাছড়া ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার শুভমালা চাকমা ও ওর্য়াড মেম্বার মঙ্গলেশ্বর চাকমা।
৩নং আইমাছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অমর কুমার চাকমা জানান- এ যাবৎকাল ইউনিয়ন পরিষদ যে কাজ করতে পারেনি তা এলাকার মানুষ তাদের আর্থ- সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্পূর্ন স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মান করে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। এলাকাবাসীর এ মহৎ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আগামীতে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।
অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মতিউর রহমান জানান- এলাকার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে যে রাস্তাটি করেছে তা প্রশংসার যোগ্য। এলাকাবাসীদের এ মহৎ উদ্যোগ অন্যদের ও অনুপ্রানিত করবে। তবে ব্রীজ কালভার্ট সহ অন্যান্য সহযোগিতা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর অবশ্যই করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া পারভীন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, গ্রামের মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মাণ করার বিষয়টি তাকে কেউ জানায়নি। তবেএ ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top