logo
news image

উল্লাপাড়ায় ট্রেন-মাইক্রো সংঘর্ষে নিহত ১০

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিরাজগঞ্জ।  ।  
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সলপ স্টেশনের অদূরে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী পদ্মা আন্তঃনগর ট্রেনের সঙ্গে বিয়ের যাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে বর-কনেসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৯ জন মারা যান দুর্ঘটনায়, অপরজন ছেলের লাশ দেখে হাসপাতালে স্ট্রোক করে মারা যান।
সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সলপ স্টেশনের উত্তরে সংলগ্ন পঞ্চক্রোশী আলী আহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে উন্মুক্ত ও অরক্ষিত রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, কনে জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার চরঘাটিনা গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল গফুরে মেয়ে সুমাইয়া খাতুন এবং বর জেলা সদরের কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের উত্তর কান্দাপাড়া গ্রামের আলতাব হোসেনের ছেলে রাজন শেখ, বরের ভগ্নিপতি সুমন শেখ, বরযাত্রী একই গ্রামের টুটুল শেখ, খোকন মিয়া, শরিফুল ইসলাম শরিফ, ভাষান আলী, আব্দুস সামাদ ও বায়োজিদ হোসেন। অন্যদিকে, দুর্ঘটনার খবর শুনে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ছেলে সমুনের লাশ দেখে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বাবা মুছা শেখ।
এ সময় মাইক্রোবাসে থাকা আরো ৪ জন ও ট্রেনের ৬ জনসহ আরোহীসহ মোট ১০ জন আহত হন। দুর্ঘটনায় আহত মাইক্রেবাসের যাত্রী ও বরের আত্মীয় লাদেন শেখ, নিরব ও বায়োজিদ নামে আরো দুইজন জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মো. গোলাম মোস্তফা জানান, উন্মুক্ত লেভেল ক্রসিং পারাপারের সময় বিয়ে বহরের একটি মাইক্রোবাস ট্রেনের সাথে ধাক্কা খেলে ঘটনাস্থলে ৯ জন মারা যান। এদের মধ্যে চালক ও একই পরিবারের ৮ জন রয়েছেন। অরক্ষিত রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংয়ের কোনো ব্যারিয়ার বা বার্জ ছিল না। এমনকি, সেখানে রেল বিভাগের কোনো পাহারাও ছিল।
এদিকে সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক রোকনুজ্জাজমান মুছা শেখের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “ছেলের লাশ দেখে শোকে স্ট্রোক করে মারা যান মুছা। দুর্ঘটনায় আহত বাকীদের চিকিৎসা চলছে।”
জিআরপি থানার ওসি হারুন মজুমদার ও দমকল বাহিনীর সহকারী উপ-পরিচালক আব্দুল হামিদ জানান, বরযাত্রী ভর্তি দু’টি বিয়ের মাইক্রোবাস উল্লাপাড়ার ঘাটিনা থেকে সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের কালিয়া কান্দাপাড়ায় যাচ্ছিল। সলপ ষ্টেশনের উত্তর পাশে উন্মুক্ত লেভেল ক্রসিং পারাপারের সময় দু’টি বিয়ের গাড়ির একটি মাইক্রেবাস (ঢাকা মেট্রো-চ-১৫-৪১৫৯) ট্রেনের সাথে ধাক্কা খেয়ে বর-কনেসহ ৯ জন মারা যান। এ ছাড়া আহত হন ট্রেনের আরোহীসহ কমপক্ষে আরো ১০ জন। আহতদের মধ্যে ৪ জনকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের পর সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ট্রেনটি যাতে বিক্ষুব্ধরা অগ্নি সংযোগ না করে সে জন্য শুরু থেকেই তৎপর ছিল দমকল বাহিনীর লোকজন ও পুলিশ।
পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগের পাকশীর বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মিজানুর রহমান বলেন, “রেল লেভেল অরক্ষিত হোক, আর যাই হোক, দোষ মাইক্রো চালকের। ট্রেন দেখার পর তারা কেন হুড়োহুড়ি করে যাবার চেষ্টা করছিল? এটা মূলত তাদেরই মূর্খতা। এখানে রেলের কারোর কোনো দায় নেই। আর তা ছাড়া এটা রেল বিভাগের নির্ধারিত কোনো লেভেল ক্রসিং নয়। স্থানীয় লোকজন নিজেদের স্বার্থে চলাচলের জন্য সেখানে উন্মুক্ত রেখেছে। দুর্ঘটনার পর ট্রেনটি সলপ ষ্টেশনে দাঁড়িয়েছিল। বিক্ষুব্ধ লোকজন ট্রেনের ক্ষয়ক্ষতির চেষ্টা করে। রেল পুলিশ, দমকল বাহিনী ও উল্লাপাড়া থানা পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দেড়ঘন্টা দেরীতে ট্রেনটি ঢাকার দিকে ছেড়ে যায়।”

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top