logo
news image

নাটোর একটি উর্বর ভূমি ও শান্তির জনপদ

শাহিনা খাতুন।  ।  
প্রিয় নাটোরবাসী,
 আসসালামু আলাইকুম। আজ থেকে দুই বছর ২৫ দিন আগে ২০১৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেল বেলা নাটোর সার্কিট হাউজে এসে উঠেছিলাম। ১৫ সেপ্টেম্বর খলিল স্যারের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিলাম। স্যার ছোট বোনকে যেমন ঘরের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয় তেমনি তিনি নাটোর ডিসি অফিসের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। সেই থেকে জেলা প্রশাসক হিসেবে নাটোরবাসীর সাথে যুক্ত ছিলাম। প্রথমে এসে নাটোরের বিভিন্ন পেশার লোকদের সাথে মতবিনিময় করেছিলাম। মতবিনিময়ের পর সমস্যা এবং সম্ভাবনাগুলোকে আলাদা করেছিলাম। সমস্যাগুলোকে দূর করার যেমন চেষ্টা করেছি, সম্ভাবনাগুলোকেও কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। এরপর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যা পারিনি তা হচ্ছে কাচিকাটা ব্রীজের টোলপ্লাজার আগে নাটোর জেলার শুরুতে উত্তরা গণভবনের গেটের আদলে একটি গেট করা। যার নাম হবে নাটোর গেট। যা দেখলেই মনে হবে রাজ রাজণ্যের নাটোরে প্রবেশ করছি। অফিসের গেটের পাশে বনলতা সেন ভাস্কর্য্য নির্মাণ এবং বনলতা সেন চত্ত্বর বানানো। জেলার পর্যটন স্পটগুলোকে চিহ্নিত করেছিলাম কিন্তু উন্নয়ন করতে পারিনি। ব্রান্ডবুকের একটি আপডেট ভার্সন বের করতে চেয়েছিলাম । রাজকুমারী ইন্দুপ্রভার কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম। কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, নাটোর গভর্নমেন্ট বয়েজ স্কুল, নাটোর গভর্নমেন্ট  গার্লস স্কুল, বনলতা বালিকা বিদ্যালয় ও নববিধান গার্লস স্কুলকে ঢাকার রাজউক/ভিকারুন্নেসা/মতিঝিল আইডিয়াল/গভ: ল্যাবরেটরী স্কুলের মত মানসম্পন্ন স্কুলে পরিণত করতে চেয়েছিলাম। এ জেলার নিজস্ব সংস্কৃতি যেমন মাদার গান, ভাসমান গান সংকলন এবং সাকামসহ সকল সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে চাঙ্গা করতে চেয়েছিলাম, ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলাম। রানী ভবানীর রাজবাড়ীকে আর একটু সুন্দর করতে চেয়েছিলাম। গুরুদাসপুরের বিলশা, সিংড়ার চলন বিল, নলডাঙ্গার হালতি বিল ও বড়াইগ্রামের চিনাডাঙ্গার বিলকে আধুনিক পর্যটন সুবিধা সম্পন্ন পর্যটন স্পটে পরিণত করতে চেয়েছিলাম। দিঘাপতিয়া বালিকা শিশু সদনকে সরকারী বালিকা শিশু সদনে রুপান্তর করতে চেয়েছিলাম। নাটোর সদর ও লালপুরে ইকোনোমিক অঞ্চলের কাজ এবং উত্তরা গণভবনের সামনে  ও ভিতরে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে সেটা দেখে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। কি পেরেছি সে হিসাবের ভার আপনাদের উপর রইলো।
এসব কাজ করতে করতে ভাবতে ভাবতে কখন যেন আপনাদের আপন হয়ে গিয়েছিলাম। নাটোর এসে কোন ঈদ পর্যন্ত নাটোর ছেড়ে কোথাও করিনি। বিনিময়ে আপনাদের ভালবাসা পেয়েছি। আপনাদের অকৃত্রিম ভালবাসা আমাকে আরও দায়িত্বশীল করেছিল। আপনাদের নির্ভরতা আমার চলার শক্তি হয়েছিল। দরিদ্র সংগঠনগুলোকে বেশী ভালবাসতাম। আপনারা যারা এসব কাজে সহায়তা করেছেন তাদের প্রতি রইল ভালবাসা আর কৃতজ্ঞতা । আমার অনুজ সহকর্মীরা দাপ্তরিক কাজের পরও দিনরাত পরিশ্রম করে অনেক ইনোভেটিভ কাজ করেছে। আমি দেখেছি ওরা শুধু জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা হিসেবে নয়, নাটোরকে ভালবেসে আমাকে ভালবেসে অহোরাত্র কাজ করেছে। তাদেরকে ছেড়ে যেতেও খুব কষ্ট হচ্ছে।
নাটোর একটি উর্বর ভূমি ও শান্তির জনপদ। আপনারা সকলে মিলে দল-মত বিভেদ ভুলে একসাথে কাজ করলে শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে, সংস্কৃতিতে, অবকাঠামোয়, কৃষিতে, শিল্পে এবং সকল ক্ষেত্রে এ জেলা এগিয়ে থাকবে। নাটোরের গ্রামে গঞ্জে শহরে রাস্তাঘাটে চলতে চলতে ভালবেসে ফেলেছি নাটোরকে। সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু যাওয়া-আসা শব্দ দুটো পাশাপাশি থাকে। তাই এসেছি যখন যেতেই হবে। আমি বিশ্বাস করি কোন আবৃতি সন্ধ্যায় বা লালন সন্ধ্যায় আমাকে আপনাদের মনে পড়বে।
দোয়া রইল। ভাল থাকুন সকলে।

*শাহিনা খাতুন, জেলা প্রশাসক, নাটোর। তারিখ- ০৯ অক্টোবর, ২০১৮ খ্রি:

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top