নবেসুমির ৯১তম মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন শুক্রবার
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস লিমিটেডের ৯১তম মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন হচ্ছে।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর ২০২৩) বিকেলে মিলের ২০২৩-২০২৪ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন ৫৮ নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল।
বিএসএফআইসি চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) শেখ শোয়েবুল আলমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি থাকবেন নাটোর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু নাছের ভূঁঞা, পুলিশ সুপার (এসপি) মো. তারিকুল ইসলাম, মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কৃষিবিদ মোহাম্মদ খবির উদ্দিন মোল্যা প্রমুখ।
মিল সূত্রে জানা যায়, মেসার্স সুরুজমাল ও নাগরমাল নামক প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তি মালিকানায় ১৯৩০ সালে কারখানার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরীক্ষামূলক উৎপাদন ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন ১৯৩৩ সালে শুরু হয়। জাভা হতে ক্রয়কৃত সেকেন্ড হ্যান্ড মিল। অনুমোদিত মুলধন ছিল ৫০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস্ লিমিটেড ১৯৬৫ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার এই প্রতিষ্ঠানটিকে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান হিসাবে ঘোষণা করে। যার ইক্ষু মাড়াই ক্ষমতা শুরুতে ১ হাজার ২২০ মেট্রিক টন থেকে বর্তমানে ১২ হাজার ২০০ মেট্রিক টন এবং চিনি উৎপাদন শুরুতে ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন থেকে বর্তমানে ১৫ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। মিলের মোট জমির পরিমাণ কারখানা ও আবাসিক এলাকা ৬৬.১৫ একর। মিল এলাকার আয়তন ৩২৯ (১৫ কিলো মিটার) বর্গ কিলো মিটার। মোট চাষের পরিমাণ ২২ হাজার ৭২০ হেক্টর। মিলের ৩২টি আখ ক্রয় কেন্দ্র ১৫.১২৭৫ একর ৮টি বার্ণিজ্যিক খামারের জমির পরিমাণ ৪৮৭৮.০৫ একর মোট জমির পরিমাণ ৪৯৫৯.৬২৭৫ একর, ৮টি বাণিজ্যিক খামার নরেন্দ্রপুর খামার, গোবিন্দপুর খামার, ভবানিপুর খামার, কৃষ্ণা খামার, মূলাডুলি খামার, নান্দ খামার, বরাল খামার, বীজ বর্ধন খামার। মিলের ভেতর পুকুর পাড়ে (শহীদ সাগর) ১৯৭১ সালের ৫ মে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার বাহিনী সুগার মিল অবরুদ্ধ করে তৎকালীন প্রশাসক ও ৪২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শতাধিক লোককে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। একটি ট্রেনিং কমপ্লেক্স, একটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল, পাঁচটি ক্লাব, একটি চিকিৎসা কেন্দ্র, ৬০০টি বাসস্থান, স্থায়ী, মৌসুমী ও চুক্তি ভিত্তিক ১ হাজার ৬০ জন শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তা নিয়ে মিলটি চালু রয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে অধ্যবদি মিলের অবসর প্রাপ্ত প্রায় দুই শ শ্রমিকের ১৭ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মিলটিকে ২৫ বার লাভ ও ২৬ বার লোকসান গুনতে হয়েছে। বর্তমানে মিলটি ৮৩১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা লোকসানে রয়েছে।
মিলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মো. আসহাব উদ্দিন বলেন, ২০২২-২০২৩ রোপণ মৌসুমে মিলের নিজস্ব ১ হাজার ৬০২ একর ও মিল এলাকায় ১১ হাজার ৫০০ জন কৃষকের ১৩ হাজার ৯৮ একরসহ মোট ১৪ হাজার ৭০০ একর জমিতে আখচাষ হয়েছে। ১০৩ কার্যদিবসে ১ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ১১ হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চিনি আহরণের হার ধরা হয়েছে শতকরা ৬.৫০ ভাগ। উৎপাদিত চিনির মূল্য ধরা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। গত ২০২২-২০২৩ মাড়াই মৌসুমে ৫২ কর্মদিবসে ৮১ হাজার ৮২৯ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৪ হাজার ৪০৭ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদ করা হয়। চিনি আহরণের হার ছিল শতকরা ৫.৩৬ ভাগ।
মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কৃষিবিদ মোহাম্মদ খবির উদ্দিন মোল্যা বলেন, এ বছর আখের মূল্য ১৮০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরবর্তী মৌসুমে তা বৃদ্ধি করে ২৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাষিদের কষ্টার্জিত আখের মূল্য সহজ ও নিরাপদ করতে বিকাশ সিস্টেম চালু করা হয়েছে। প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে পূর্জির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মিলকে লাভজনক ও চাষিদের আখ আবাদে উৎসাহিত করতে ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মান সম্মত সার, কীটনাশক ও বীজ চাষিদের মধ্যে সরবরাহ, অবৈধ আখ মাড়াই ও পাচার বন্ধ করে মিলে আখ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কার্যকরী ব্যবস্থা, মিলের নিজস্ব জমি (খামার) আধুনিকায়ন করে আখ উৎপাদন বৃদ্ধি, অনাবাদী জমি আবাদযোগ্য করতে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শুকনা মৌসুমে সেচ কার্যক্রম নিশ্চিত করতে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য