logo
news image

গর্বিত ট্যাক্সদাতা হই-মেয়র লিটন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী।  ।  
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আসুন আমরা সবাই মিলে রাজশাহীকে গড়ি, দেশকে গড়ি, নিজ নিজ জায়গা থেকে অবদান রাখি, অবদান রেখে গর্ব করি আমি একজন ট্যাক্সদাতা, আমি দেশকে ট্যাক্স দেই। সেটা ৫ হাজার হোক, কিংবা ৫ লাখ বা ৫ কোটি। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী এই গর্ব নিয়ে বাঁচতে চাই। এটিই হোক আজকের ব্রত, আজকের শপথ।’ মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) সকালে কর অঞ্চল রাজশাহী আয়োজিত কর মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ১৮ কোটি মানুষের দেশে কেন মাত্র ৩৫ লক্ষ ট্যাক্সদাতা থাকবে? কেন এটি এক কোটি ৩৫ লাখ হবে না, কেন এটি আড়াইকোটি হবে না? উন্নত বিশ্বে ৯৯ শতাংশ মানুষ ট্যাক্স দেয়, আমাদের তো ৯৯ শতাংশ মানুষের ট্যাক্স দেওয়ার দরকার নেই, অন্তত ২৫ শতাংশ ট্যাক্স প্রদানকারী হোক। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ট্যাক্স প্রদানের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়ে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, যারা সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র কিনেছেন, তাদের মধ্যে কতজন ইনকাম ট্যাক্স দেন, এটি খতিয়ে দেখতে কর বিভাগের কর্মকর্তাদের অনুরোধ করছি। আওয়ামী লীগের ৪ হাজারেরও বেশি মনোনয়ন ফরম তুলেছেন, বিএনপি থেকে কত হাজার তুলবে, আজকে জানা যাবে। দয়া করে যদি একটু খোঁজ নিয়ে দেখেন, তাহলে দেখবেন আমার বিশ্বাস মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ৫০ শতাংশেরও বেশি এক টাকাও ট্যাক্স দেয় না। এদের ধরা দরকার। এখন সময় এসেছে এই সমস্ত দুরাচার অন্যাচার, জনবিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ করা দরকার। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সবদিকে, নৈতিকতা হারিয়ে যাবে? দেশের উন্নয়ন হলেও আজকে তো নৈতিকতার দিকে উন্নয়ন হচ্ছে না। জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সুযোগ্য সন্তান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, সমাজের পচন হয় উপর থেকে, নিচ থেকে নয়। একজন কৃষক, শ্রমজীবী, রিকশা চালক, ক্ষুদ্র দোকানদার, ব্যবসায়ী সে সমাজকে নষ্ট করতে পারে না। নষ্ট করার মতো তার সক্ষমতাও নেই। নষ্ট করে রাষ্ট্রের যারা শীর্ষ পর্যায়ে আছেন, যারা জনগণের তথাকথিত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, অথবা অবৈধভাবে ক্ষমতাদখলকারীরা। বাংলাদেশের সমাজের তথাকথিত শিল্পপতি, সমাজসেবী বা আইন প্রণেতা নামে যারা ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় স্বগর্বে বিচরণ করছেন, তাদের এক পুরুষ, দুই পুরুষ আগে বাব-দাদার ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা হয়েছেন কথাকথিত জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবী। এভাবে আমাদের সমাজের পচন ধরেছে। মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন আরো বলেন, আমরা উন্নয়ন করছি প্রচুর, এতে কোন সন্দেহ নেই। আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে, রাস্তাঘাট ঝকঝকে তকতকে হচ্ছে, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় বৃদ্ধি পেয়েছে, শিক্ষার মান বৃদ্ধি হচ্ছে এবং সকল রকম অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি হচ্ছে, দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। কিন্তু নৈতিকতার নিদারুণ অবক্ষয় আজও বন্ধ করা যায়নি। আমি যদি চার পুরুষ-পাঁচ পুরুষের পরিচয়-ঠিকানা নিয়ে জনগণের সেবা করে রাজশাহী শহরে ক্ষুদ্রভাবে জীবনযাপন করতে পারি, তাহলে ওরা কারা যাদের এক পুরুষ আগে বাব-দাদার ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যেত না, তারা ঢাকায় গ্রুপ অব কোম্পানি, গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি খুলে বসে আছে। তারা কতটাকা ট্যাক্স দেয়? তাদের আয়ের সঙ্গে সেই ট্যাক্স মিলে কিনা? তাদের যে আয়, মালয়েশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা অন্যদেশে বাড়িঘর করে কিভাবে? আয়কর বিভাগ কী করে? আয়কর বিভাগের গোয়েন্দা বিভাগ কী করে? তারা ধরতে পারেন না তাদেরকে? খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমন কেউ নেই যে সংসদ সদস্যের মনোনয়নপত্র কিনছেন না। এই অপসংস্কৃতিক কেন হবে? এটাকে গণতন্ত্রের একটা দৃষ্টান্ত বলে কেউ যদি আত্মপ্রশাদ লাভ করে আমি তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। কর অঞ্চল রাজশাহীর কর কমিশনার ড. খন্দকার মো. ফেরদৌস আলমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর) আলমগীর হোসেন, রাজশাহীর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আমিনুল ইসলাম, রাজশাহী চেম্বার অব কর্মাস এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এর সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি, রাজশাহী আয়কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাড. মহসীন খান। আলোচনা সভা শেষে কর মেলায় মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন নিজের ও তাঁর সহর্ধমীনী মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেনীর ইনকাম ট্যাক্স প্রদান করেন। এরপর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কর মেলার উদ্বোধন করেন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনসহ অন্যান্য অতিথিরা।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top