logo
news image

ময়নার যুদ্ধ বিজয়ের দিনে শহীদদের স্মরণ

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুরের ময়নার আম্রকাননে যুদ্ধ বিজয়ের দিনে শহীদদের স্মরণ করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ এই দিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে জনযুদ্ধে প্রথম বিজয় অর্জিত হয়। ২৫নং পাঞ্জাব রেজিমেন্ট মুক্তিপাগল জনতা, ইপিআর ও আনসার বাহিনীর কাছে পর্যুদস্তু ও ধ্বংস হয়। প্রতিরোধ ও সম্মুখ যুদ্ধে রক্তাক্ত প্রান্তরে সাঁওতাল তীরন্দাজসহ প্রায় ৪০জন শহীদ হন।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ ২০২৩) দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শামীম আহমেদ সাগর, আওয়ামী লীগ নেতা মো. আনিছুর রহমান, ওয়ালিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমানসহ শহীদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ সৈয়দ আলী মোল্লার ছেলে মো. ইদ্রিস আলী মোল্লা (৭৩) বলেন, ওই দিন পাকবাহিনী একটি আম গাছের সঙ্গে আটজন মুক্তিযোদ্ধাকে বেঁধে গুলি করে। আব্দুস সামাদ নামে একজন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। বছর কয়েক আগে তিনিও মারা গেছেন। সেই গাছটি গায়ে বুলেটের চিহ্ন নিয়ে এখনো বেঁচে আছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ আবু রায়হান মোল্লার আম গাছটি কিনে ২০১৪ সালের ৩০ মার্চ এটিকে ‘জীবন্ত স্মৃতিসৌধ’ হিসেবে ঘোষণা করেন।
ময়নার যুদ্ধে শহীদ ও যুদ্ধাহত কেউ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি। ১৯৯৮ সালের ৩০ মার্চ ‘ময়না শহীদ স্মৃতিসৌধ’ উদ্বোধন করেন সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মমতাজ উদ্দিন। ময়নার আম্রকাননে ৫ শতাংশ জায়গায় নির্মিত হয়েছে শহীদ স্মৃতিসৌধ। সংগ্রহশালা ও পাঠাগারের জন্য নির্ধারিত ২ শতাংশ জমি রয়েছে। জীবন্ত স্মৃতিসৌধ বুলেটবিদ্ধ আমগাছটি মৃতপ্রায় বেঁচে আছে। সাতজন শহীদের গণকবর অরক্ষিত জঙ্গল হিসেবে রয়েছে।
ময়নাযুদ্ধে শহীদরা হলেন: সৈয়দ আলী মোল্লা, মসলেম আলী মোল্লা, আবুল কাশেম মোল্লা, আয়েজ উদ্দিন মোল্লা, খন্দকার নুরুন্নবী মন্টু ওরফে রাঙ্গা, কেরামত আলী শেখ ওরফে কিয়ামত, খাইরুল আনাম ছাত্তার, বকস সরদার, করম আলী, আবেদ আলী, আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল কুদ্দুস, কালু মিয়া, সেকেন্দার আলী, আছের উদ্দিন, জয়নাল আবেদিন, কেরু ফকির, নুরুন্নবী, ইয়াছিন আলী, যুধিষ্ঠির প্রাং, শৈলেন্দ্র কুমার চক্রবর্তী ওরফে মঙ্গল, সায়ের উল্লাহ মুন্সী, আব্দুল লতিফ মুন্সী, আব্দুল গফুর, নুরুল ইসলাম সরদার, তইজ আলী, জাহাঙ্গির হোসেন, সাদের আলী, নাসির উদ্দিন, কালু শেখ, কুদ্দুস শেখ, সামাদ শেখ, সাবেদ আলী প্রমুখ।
নাটোর জেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রউফ সরকার বলেন, পাবনায় ২৭ মার্চ মুক্তিবাহিনী ও জনতার প্রতিরোধে ৮০জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হন। এ ঘটনার পর রাজশাহীর ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ডেপুটি কমান্ডিং অফিসার মেজর রাজা আসলাম ২৮ মার্চ অবশিষ্ট সৈন্যদের উদ্ধারে আসেন। দুটি পিকআপ, চারটি জিপ ও দুটি ট্রাকে ২৯ মার্চ প্রায় ৪০জন সেনা সদস্য রাজশাহীতে রওনা দেন। পথিমধ্যে নাটোর ও দাশুড়িয়ায় ছাত্র-জনতার প্রতিরোধে কাঁচা রাস্তায় লালপুরের দিকে যাত্রা করেন। গোপালপুর রেললাইনে ওয়াগন দিয়ে ব্যারিকেড ও ইছামতি খালের ব্রিজের রাস্তা কেটে প্রতিরোধে ময়না গ্রামে সৈয়দ আলী মোল্লা ও নওয়াব আলী মোল্লার বাড়ি দখল করে চারটি মেশিনগান স্থাপন করে। এ সময় ধরে এনে একটি আমগাছের সাথে বেঁধে ৭ জনকে গুলি করে হত্যা করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তিপাগল হাজারো জনতা ময়না প্রান্তরে একত্রিত হয়ে গ্রাম ঘিরে পুলিশ, ইপিআর ও আনসার সদস্যের একটি সশস্ত্র প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলেন। দিশেহারা পাকবাহিনী গুলিবর্ষণ করলে জনতা তীর-ধনুক, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। জনতা ইছামতি খালের ওপর ব্রিজ ভেঙ্গে ফেলেন। সেনাদের উদ্ধারে ৩০ মার্চ কয়েকটি হেলিকপ্টার থেকে ব্যাপকভাবে গুলি ও বোমাবর্ষণ করে। প্রতিরোধকারীরা হেলিকাপ্টারকে লক্ষ করে রাইফেল দিয়ে গুলিবর্ষণ করে। অবরুদ্ধ সেনারা আখখেতে আত্মগোপন ও পালানোর সময় ধরে অনেককে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। একটি জঙ্গলে পালিয়ে থাকা মেজর রাজা আসলামকে ধরে এনে লালপুর শ্রী সুন্দরী পাইলট হাইস্কুল মাঠে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ধ্বংস হয়।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top