logo
news image

১৯তম শিরোপা জয় আবাহনীর

সকাল থেকেই চাপা উত্তেজনা, প্রায় পাঁচ-ছয়শ দর্শকের সমাগম বিকেএসপিতে। নিকট অতীতে এই ভেন্যুতে দেখা যায়নি। এই পাঁচশ জোড়া চোখ অলক্ষ্যে বিকেএসপি ছাড়িয়ে নজর রাখছিল প্রায় ৪৮ কি.মি. দূরের মিরপুর স্টেডিয়ামে। নাসির হোসেন-নাজমুল হোসেন শান্তর জোড়া সেঞ্চুরির পর ভরদুপুরের খরতাপের তীব্রতা কমার আগেই উত্সবের আমেজ শুরু হয় আবাহনীর ডাগআউট, ভিআইপিতে ক্লাবটির কর্মকর্তাদের আড্ডায়, আগত দর্শকদের মাঝে। কারণ ততক্ষণে শেখ জামালকে চার উইকেটে হারিয়েছে খেলাঘর। কার্যত তখনই আবাহনীর শিরোপা নিশ্চিত হয়ে গেছে।

ইনিংসের ২৯তম ওভারের শেষ বলে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের শেষ ভরসা মুশফিকুর রহিম আউট হতেই বিকেএসপিতে ব্যান্ড পার্টি, ঢাক-ঢোলের বাদ্যি সরব হতে শুরু করে। পড়ন্ত বিকেলে আবাহনীর শিরোপার আনন্দ পূর্ণতা পায়। গতকাল রূপগঞ্জকে ৯৪ রানে পরাজিত করে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় আবাহনী। লিগে এটি তাদের সর্বাধিক ১৯তম শিরোপা। পয়েন্ট টেবিলে চার পয়েন্ট এগিয়ে থেকে ট্রফি নিশ্চিত করেছে আবাহনী (২৪)।

প্রথমে ব্যাট করে আবাহনী ছয় উইকেটে ৩৭৪ রানের স্কোর গড়ে। জবাবে ৪২.৪ ওভারে ২৮০ রানে অলআউট হয় রূপগঞ্জ। নাসির হোসেন ম্যাচ সেরা হন।

বোলিংয়ে বেধড়ক পিটুনির শিকার হওয়া রূপগঞ্জের জন্য ৩৭৫ রানের টার্গেট ছিল কঠিনতম চ্যালেঞ্জ। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আব্দুল মজিদ (০) মিরাজের শিকার হন। তারপর এত বড় টার্গেট তাড়া করার মতো গতিময় ব্যাটিংটা আর করতে পারেনি রূপগঞ্জ। ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম চেষ্টা করেছেন শুরুতে। ৫৪ বলে ৭০ রানের ইনিংস খেলে নাসিরের বলে বোল্ড হন নাঈম। মুশফিকের লড়াইটা থেমে গেছে দলীয় ১৯০ রানে। ৬৭ রান করে নাসিরের শিকার হন তিনি। এরপর নাঈমের ৭৬, পারভেজ রসুলের ২৯ রান শুধু রূপগঞ্জের পরাজয়ের ব্যবধানই কমাতে পেরেছে। আবাহনীর মিরাজ, সানজামুল, নাসির, সন্দীপ রায় দুটি করে উইকেট পান।   

এর আগে রানপ্রসবা উইকেটে এনামুল হক বিজয়-নাজমুল শান্তর ৯২ রানের জুটিতে দারুণ শুরু পেয়েছিল আবাহনী। ইনিংসের ১৩তম ওভারে রূপগঞ্জকে ব্রেক থ্রু এনে দেন পারভেজ রসুল। বিজয় ৫৭ রান করে ফিরেন। তারপরই রানের গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে আসে ছয় রানের ব্যবধানে হানুমা বিহারী (৬) ও মিঠুন (১) আউট হলে। আবাহনীকে আরও চাপে ফেলার সুযোগ পেয়েছিল রূপগঞ্জ।

উইকেটে এসেই সংগ্রাম করতে থাকা নাসির দুই অঙ্কের ঘর স্পর্শ করার আগেই ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু পারভেজ রসুলের বলে শর্ট মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ ফেলেন আশিকুজ্জামান। এখানেই শেষ নয়। রূপগঞ্জের ফিল্ডারদের পিচ্ছিল হাত থেকে নাসিরের আরও দুটি ক্যাচ পড়েছে। ২৭ রানে নাঈম রিটার্ন ক্যাচ ফেলেছেন, ৬৩ রানে মোশাররফ হোসেন রুবেল ফেলেছেন আবাহনী অধিনায়কের ক্যাচ।

এরপর পর ফিরে তাকাতে হয়নি নাসিরকে। উইকেটে থিতু হয়ে খেলেছেন দারুণ সব শট। লিগে নিজের প্রথম ও লিস্ট-এ ক্রিকেটে ষষ্ঠ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন নাসির ৭৯ বলে। একপ্রান্ত আগলে খেলা নাজমুল শান্ত পরিণত ব্যাটিং করেছেন। ৯৭ বলে ষষ্ঠ সেঞ্চুরি করেছেন এ বাঁহাতি ওপেনারও। লিগে এটি তার চতুর্থ সেঞ্চুরি। 

রূপগঞ্জের যাচ্ছেতাই ফিল্ডিংয়ের সুযোগে নাসির-শান্ত চতুর্থ উইকেট ১৮৭ রানের জুটি গড়েন। তাতেই বিশাল স্কোরের পথে এগিয়ে যায় আবাহনী। দলীয় ৩১০ রানে নাসির আউট হন ৯১ বলে ১২৯ রান (১৫ চার, ৪ ছয়) করে। সেঞ্চুরির পর নাজমুল শান্ত আউট হয়েছেন শহীদের বলে এলবির ফাঁদে পড়ে। ১০৭ বলে ১১৩ রান (১১ চার, ২ ছয়) করেন তিনি। শেষ দিকে মাশরাফির অপরাজিত ৮ বলে ২৮ রানের (৪ ছয়) ক্যামিও, মোসাদ্দেকের ১৪ বলে অপরাজিত ১৯ রানের ইনিংসে সাড়ে তিনশো ছাড়ায় আবাহনীর স্কোর। রূপগঞ্জের পারভেজ রসুল তিনটি, শহীদ দুটি উইকেট পান। 

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top