রাষ্ট্রায়ত্ব চিনিকল বন্ধ নয়
মো. দেলোয়ার হোসেন পিন্টু:
রাষ্ট্রায়ত্ব চিনিকল বন্ধ নয়, আধুনিকায়ন ও বহুমুখীকরণ করে চিনিশিল্প ও আখচাষীদের রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। ‘আখের তৈরী চিনি খান, চিনি শিল্পকে বাঁচান’।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নিতি নির্ধারকগণ, সচিব-আমলা, সচেতন মহল এবং সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, র্যাব, পুলিশ, বডার গার্ড বাংলাদেশ, আনসার, ভিডিপিসহ অন্যান্য সংস্থার কাছে আমার অনুরোধ। আপনারা যারা দেশে তৈরি আখের ক্যামিক্যাল মুক্ত হালাল ও প্রাকৃতিক লাল চিনি খান। সেই চিনির মিল যেন কোন অসুভ চক্রের চক্রান্তে বন্ধ না হয় সেই জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
আখের চিনি শিশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। আখের চিনি ১০০% হালাল, প্রাকৃতির ও স্বাস্থ্যকর। আখের চিনি পুষ্টিমানে সর্বোৎকৃষ্ট।
আখের চিনি শিশুদের মেধা বিকাশে অনন্য ভূমিকা রাখে। আখের চিনি দেশের চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আখের চিনি উৎপাদিত মিলগুলো দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষা করে।
দেশীয় আখের চিনি যে সত্যিই নির্ভেজাল, পক্ষান্তরে বিদেশি সাদা চিনি যে ভেজাল সেইটা আপনিও একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন। আপনার আশেপাশের মুদিখানা দোকানে/চা দোকানে দেখবেন যে, আখের চিনিতে পিঁপড়া ও মৌমাছি বসেছে কিন্তু সাদা চিনিতে পিঁপড়ে বা মৌমাছি বসে না। এ ছাড়াও চা, সরবত, যেকোন খাবার জিনিস তৈরি করতে যেখানে লাল চিনি লাগে এক চা-চামচ, সেখানে সাদা চিনি লাগে দেড় চা-চামচ এতেও সাশ্রয় হয়। তাই আসুন আমরা সকলেই ক্ষতি কারক ক্যামিক্যালে তৈরী সাদা চিনি পরিহার করে, আখের তৈরী ক্যামিক্যাল মুক্ত হালাল ও প্রাকৃতিক লাল চিনি ব্যবহার করি। প্রাণঘাতী বিভিন্ন মরণ রোগ হতে শিশুদেরসহ নিজেদের জীবন রক্ষা করি।
এক কেজি খোলা/লুজ চিনির মূল্য ৬৩ টাকা মিল রেট। সেখানে এক কেজি প্যাকেট চিনির মূল্য ৬৮ টাকা মিল রেট।
দীর্ঘ দিন ধরে দেশের অশুভ চক্র, সাদা চিনি সিন্ডিকেট মিলগুলো বন্ধের যে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের চাওয়া মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেলে চিনির বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তখন তারা তাদের ইচ্ছেমত ২০০ হইতে ২৫০ টাকা চিনির দাম নিবে। ভুক্তভোগী জনগণ বেশি দামে চিনি খাওয়ার ফলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে আটটি মিলে মাড়াই কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মাড়াই স্থগিতকৃত মিলের জনবল (নবেসুমিসহ অন্যান্য ছয়টি মিলে) সমন্বয়ের জন্য সদর দপ্তরে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে অতীসত্ত্বর সমন্বয়ের প্রস্তাবনা তৈরি করে জমা দিতে বলা হয়েছে। নবেসুমিসহ চালুকৃত মিলগুলোর মৌসুমী জনবলকে অভ্যন্তরিন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে, দৈনিক হাজিরায় কর্মরত জনবলকে সার্বিক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগসহ ভারপ্রাপ্ত ফোরম্যানদেরকে এবং সিডিএ/সিআইসিদেরকে পদায়ন করতে হবে এবং পূর্বপরিকল্পিত গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে। কেবলমাত্র শুন্য পদে অতিরিক্ত জনবল সমন্বয়ের প্রস্তাবনা কমিটি বাস্তবতার আলোকে সুন্দর ও সুনির্দিষ্ট সমন্বয়ের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা উচিৎ বলে আমরা মনে করি। আর তাই চলতি মিলগুলোর কাজের সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে মিলগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে সমন্বয় কমিটির হস্তক্ষেপ এবং সুদৃষ্টি কামনা করছি। পাশাপাশি মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ মিলগুলো আধুনিকায়ন করে নতুন কোন প্রজেক্ট করে কিভাবে পূণরায় চালু করা যায় তারও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা করা হয় ঘরে-ঘরে চাকরির ব্যবস্থা করবে। অথচ সরকার কোন অসুভচক্রের চক্রান্তে মিলগুলো লোকসানের অজুহাতে বন্ধ করে দিয়ে তাদের নির্বাচনী ওয়াদা ভঙ্গের পাশাপাশি দেশের বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে । দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষাকারী চিনিশিল্প আজ ধ্বংস হতে চলেছে। চিনিশিল্পকে ধ্বংস করে, চিনিকলের শ্রমিক ও আখচাষীদের জীবন ও জীবিকা বিপর্যস্ত করে দেশের অর্থনীতির একটা ক্ষেত্রকে শতভাগ বিদেশ নির্ভর করা রাষ্ট্রনীতি হতে পারে না। সবশেষ হয়ে যাওয়ার আগে এখনি সময় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে চিনিশিল্প তথা শ্রমিক ও আখচাষীদের রক্ষা করা। তাই চিনিশিল্পকে বাঁচাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ এবং সুদৃষ্টি কামনা করছি।
* মো. দেলোয়ার হোসেন পিন্টু: সাধারণ সম্পাদক, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন, গোপালপুর, লালপুর, নাটোর।
সাম্প্রতিক মন্তব্য