নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে বেজা উপ-সচিবের সন্তোষ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
নাটোরের লালপুরে পদ্মা চরে প্রস্তাবিত 'নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল' পরিদর্শন করলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) উপ-সচিব আবু হেনা মো. মোস্তাফা কামাল (ম্যানেজার, বিনিয়োগ উন্নয়ন)। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন, লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মুল বানীন দ্যুতিসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাংবাদিকবৃন্দ।
অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনকালে উপ-সচিব আবু হেনা মো. মোস্তাফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, নাটোর উত্তরাঞ্চলের প্রবেশ পথ (গেটওয়ে)। নাটোরের লালপুরে পদ্মার চরে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা সম্ভব। এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বেজা। যার ফলে এক কোটি শিক্ষিত বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আর অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বার্ষিক ১৫ হাজার মার্কিন ডলার রপ্তানী খাতে অতিরিক্ত আয় আসবে। নাটোরে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পারলে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে আশার আলো দেখতে পারবে। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে আজকে এ অঞ্চল পরিদর্শনে এসেছি। যতদ্রুত সম্ভব এ পরিদর্শন রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছে দেওয়া হবে।
পরিদর্শনকালে তিনি আরো বলেন, এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উপযোগী স্থান। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিবেশ সবই সুন্দর।
৫৮ নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, বাংলাদেশের সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত ও উষ্ণতম স্থান নাটোরের লালপুর উপজেলা। পদ্মা নদীর করাল গ্রাসে পতিত এখানকার মানুষ জীবন যুদ্ধে সহিষ্ণু। জীবন-জীবিকার সংগ্রাম নিত্য দিনের সঙ্গি হয়ে আছে। এই সংগ্রামী মানুষের উন্নয়নে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস কাজ করে চলেছেন।
তিনি আরো বলেন, 'নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল' একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মতো যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিপুল খাস জমি, বিদ্যুতের সহজলভ্যতা, গ্যাস-পানি সরবরাহ ও বণ্টন, বর্জ্য সংগ্রহ, শোধন ও অপসারণ, বাসস্থান, চিকিৎসাসেবা, সহজে কাঁচামালপ্রাপ্তিসহ প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধাই রয়েছে নাটোরের লালপুরে পদ্মার চর এলাকায়।
রাজশাহীর বানেশ্বর থেকে সারদা, চারঘাট, বাঘা ও লালপুর হয়ে ঈশ্বরদী (জেড-৬০০৬) পর্যন্ত সড়ক প্রসস্তকরণ এবং জেলা মহাসড়ককে আঞ্চলিক মহাসড়কের মানে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গত মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) একনেক সভায় অনুমোদন পায়। আমার নির্বাচনী এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ প্রকল্প এলাকার জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের কথা ভেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি গ্রহণ করায় লালপুর-বাগাতিপাড়ার জনগণের পক্ষ থেকে গভীর কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাই।
এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ স্থানীয় রেলওয়ে, সওজ (সড়ক ও জনপথ), বিদ্যুৎ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, বিমানবন্দর, গ্যাস কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) পাঠানো চার ভারতীয় পরামর্শক দল এমন অভিমত দেয়।
বেজার পরামর্শক দলের চার সদস্য অভিষেক মুখার্জি, ডে বায়ন, প্রভাকরণ ও সত্যমূর্তি নাটোরের লালপুরে আসেন। এরপর তাঁরা নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের (এনবিএসএম) অতিথিকক্ষে সরকারি সংস্থা ও বিভাগগুলোর স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তাঁরা পাকশী পশ্চিম অঞ্চল রেলওয়ে অফিস, ঈশ্বরদী বিমানবন্দর, আজিমনগর রেলস্টেশন, ঈশ্বরদী গ্যাস ট্রান্সমিশন অফিস ও পল্লী বিদ্যুতের কার্যালয় ঘুরে দেখেন। পরে তাঁরা সরেজমিনে ‘নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনের জন্য প্রস্তাবিত স্থান লালপুরের পদ্মার চর এলাকাও পরিদর্শন করেন।
পরামর্শক দলটির সদস্য অভিষেক মুখার্জি জানান, লালপুরে পদ্মার চরে নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য সব সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে এলাকার প্রায় ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। এতে এলাকারও উন্নয়ন ঘটবে। এর আগে ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ লালপুর পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব এসএম শওকত আলী ।
গত ২১ অক্টোবর ২০১৫ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেজা’র বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী ও নাটোর জেলায় দু’টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দেন। আয়তনের দিক থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল এটি। লালপুর উপজেলার আরজী বাকনাই- রসুলপুর, বন্দোবস্ত গোবিন্দপুর, বালিতিতা, লালপুর ও চরজাজিরা এই পাঁচটি মৌজার পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ চর এলাকায় তিন হাজার ৪১৮.৪৬ একর সরকারি খাসজমির ওপর প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের এলাকা থেকে পদ্মা নদীর দূরত্ব ছয় কিলোমিটার, ঈশ্বরদী জংশন থেকে ১৫ কিলোমিটার ও বিমানবন্দর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কৃষিনির্ভর এলাকা হওয়ায় এখানে কৃষিভিত্তিক শিল্প-কারখানা বিকাশের সুযোগ রয়েছে। ঈশ্বরদী থেকে গ্যাস সুবিধা পাওয়া যাবে। প্রয়োজনীয় কাঁচামালের পর্যাপ্ত সুবিধা পাওয়া যাবে। প্রস্তাবিত স্থানকে বন্যামুক্ত উচ্চতায় উন্নীত করতে আনুমানিক চার থেকে পাঁচ ফুট মাটি ভরাটের প্রয়োজন হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে গড়ে তোলা হবে কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। ইলেকট্রনিক্স কারাখানাসহ অন্য প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা যাবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কলকারখানা স্থাপনের আহ্বান জানানো হবে। জিটুজি (গভর্নর টু গভর্নর) পদ্ধতিতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান হবে এখানে। ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে পার্থক্য হলো ইপিজেডে উৎপাদিত পণ্যের ৮০ভাগ দেশের বাইরে রপ্তানি হয়। আর অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্যের সিংহ ভাগ সরবরাহ করা হবে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য