logo
news image

রাজসিক নাটোরে এক ঝাঁক শান্তির দূত

আনোয়ারা খাতুন শেফালী।।
মহারাজাদের রাজধানী রাজসিক নাটোর। অর্ধবঙ্গেশ্বরী মহারানী ভবানীর নাটোর। মিঠাই কাচা গোল্লার নাটোর। শিল্প-সাহিত্য আর ক্রীড়া ঐতিহ্যের নাটোর। কবি জীবনানন্দ দাসের শ্রেষ্ঠ কবিতা ‘নাটোরের বনলতা সেন’-এর নাটোর। ‘আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন’ কবির সেই ঐতিহাসিক নাটোরকে শান্তিময় করেছেন মহারানী ভবানীর উত্তরসূরী এ প্রজন্মের এক ঝাঁক বনলতা সেন। শান্তির অগ্রদূত হয়ে মানুষের কল্যানে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন।
লস্কর খার সৈন্যদের রসদ সংগ্রহ স্থান লস্করপুর পরগণা। সেই পরগণায় একটি জলাভুমি ‘ছাই ভাঙা বিল’। ১৭১০ খ্রীষ্টাব্দে রাজা রামজীবন বাংলার বৃহত্তম রাজশাহী জমিদারীর কেন্দ্রস্থল ওই স্থানটিতে রাজধানী স্থাপন করেন। প্রায় ৪৩ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত ভবন দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি। মন্দির, প্রাসাদ, দীঘি, উদ্যান ও মনোরম অট্টালিকা সুসজ্জিত নগরী জনাকীর্ণ হয়ে ওঠে। জয়কালীর মন্দির, বৃন্দাবনের আখড়া, রামচন্দ্রের আখড়া, গোপীনাথের মন্দির প্রভৃতি আর শহরের উত্তর প্রান্তে প্রায় ১৫০ বিঘা জমির ওপর রাজবাড়ি স্থাপিত হয়। দক্ষিণ প্রান্তে বাজার, আদালত, ইউরোপীয় নীল ও রেশম ব্যবসায়ীদের বাসস্থান নাটোর শহরকে জমজমাট নগরীতে পরিগণিত করে।
১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামাকান্ত ১৮ বৎসর বয়সে রাজ্যভার গ্রহণ করেন। তাঁর সময়ে ১৬৪টি পরগনা নাটোর রাজ্যের অধিকারভুক্ত হয়। রাজা রামাকান্ত ১৭৪৮ সালে (১১৫৩ বঙ্গাব্দে) তাঁর স্ত্রী রাণী ভবানী ও কন্যা তারাসুন্দরীকে রেখে ৩২ বছর বয়সে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর নাটোরের ইতিহাসে জনহিতৈষী মহারানী ভবানীকে জমিদারী পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করেন নবাব আলীবর্দী খাঁ। পলাশীর যুদ্ধে রাণী ভবানী বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলার পক্ষ অবলম্বন করেন। তিনি ১৮০২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ৮৬ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।  (সূত্র: নাটোরের কথা ও কাহিনী, নাটোর মহকুমা সম্মিলনী, কলকাতা, ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১ খৃষ্টাব্দ)।
১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিভাবে নাটোর দিঘাপতিয়া রাজবাড়িকে ‘উত্তরা গণভবন’ নামকরণ করেন। যা রাজধানীর ব্যতীত দেশের একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন।
নাটোর জেলার আয়তন ১৮৯৬.০৫ বর্গ কিলোমিটার। ২০১৬ সালের অনুমিত জনসংখ্যা ১৮,২৬,১৪০ জন। নির্বাচনী এলাকা     (৫৮) নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া), (৫৯) নাটোর-২ (নাটোর সদর-নলডাঙ্গা), (৬০) নাটোর-৩ (সিংড়া), (৬১) নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম)। ভোটার সংখ্যা ১০,৫০,২৭৩ জন; পুরুষ ৫,১৪,১৮৬ জন, মহিলা ৫,৩৬,০৮৭ জন। পৌরসভা ৮টির মধ্যে ক শ্রেণি ৩টি, খ শ্রেণি ২টি ও গ শ্রেণি ৩টি। ইউনিয়ন ৫২টি, গ্রাম ১,৪৩৪টি, মৌজা ১,২৬৫টি। বদ্ধ জলমহাল ৬৬৯টি, উন্মুক্ত জলমহাল ১৪টি, হাট বাজার ১৭০টি। ফসলী জমি ৩০,১৮৫৬ হেক্টর, আবাদি জমি ১৫০৮৩৮ হেক্টর, এক ফসলী ৩৪৬৭৫ হেক্টর, দুই ফসলী ৮১৫১৫ হেক্টর, তিন ফসলী ৩৪৪৪১ হেক্টর। পাকা রাস্তা ৬৫৬.০০ কিলোমিটার ও কাঁচা রাস্তা ২২৫১.৫০ কিলোমিটার।


নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের নেতৃত্বে রাজসিক নাটোরের সাতটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন সাতজন নারী। জেলার ২২তম ডিসি হিসেবে ২০২১ সালের ২২ জুন যোগদান করেন বিসিএস ২৪তম ব্যাচের এই কর্মকতা।
ডিসি শামীম আহমেদ বলেন, রাজসিক নাটোরে শান্তির দূত সাতজন ইউএনও নারী। অন্যান্য পদেও রয়েছেন নারীরা। ঘর-সংসার সামলানোর পাশাপাশি সরকারের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত থেকে সঠিকভাবে সততা, নিষ্ঠা, সুখ্যাতি ও কৃতীত্বের সাথে প্রশাসনিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করছেন। ইতোমধ্যে কর্মক্ষেত্রে নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। নারী হিসেবে তাঁরা কোন বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন না। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে নাটোর জেলা একটি ব্যতিক্রমী ইতিহাস ও অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। সেই দলের প্রধান হিসেবে গর্বিত।  
শামীমা সুলতানা, লালপুর
লালপুরের ইউএনও হিসেবে শামীমা সুলতানা ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর যোগদান করেন। বিসিএস ৩৪তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা উপজেলার ৩৫তম ইউএনও।
তিনি নওগাঁ সদরের চন্ডিপুরে ১৯৮৭ সালের ৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মোমেন (সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ও মাতা আশেদা খানম (গৃহিণী)। স্বামী সামিউল আমিন, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩১তম ব্যাচের সদস্য। তাঁদের একমাত্র সন্তান অগ্র। তিনি ঢাকার ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
এর আগে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘নারী কর্মকর্তা’ আমার কাছে একটি ইতিবাচক শক্তিশালী সম্ভাষণ মনে হয়। অর্পিত দায়িত্ব মায়া-মমতা দিয়ে পালন করার অসাধারণ সাধ্য রয়েছে নারী কর্মকর্তার। ‘জনসেবার জন্য প্রশাসন’-এই মূলমন্ত্র হৃদয়ে ধারন করে জনগনের দোরগোড়ায় স্মার্টলি সেবা পৌঁছে দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ  মোকাবিলায় স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে গড়ে তুলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
নীলুফা সরকার, বাগাতিপাড়া
বাগাতিপাড়ার ইউএনও নীলুফা সরকার ৩৪তম বিসিএস কর্মকর্তা ২০২২ সালের ১৭ জুলাই যোগদান করেন।
নীলুফা সরকার ১৯৮৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পাবনার ঈশ্বরদীতে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। জয়পুরহাটের স্থায়ী বাসিন্দা বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম জাকির উদ্দিন ও মা সুফিয়া আক্তার সরকার। স্বামী মো. জামিল আকতার (ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ড সেক্রেটারিয়েট এ কর্মরত)। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এগ্রোনমী এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
এর আগে সহকারী কমিশনার হিসেবে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ, নওগাঁর নিয়ামতপুর এবং সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ছোট বেলা থেকেই একটু ডানপিটে ছিলাম, সব সময় চ্যালেঞ্জিং চাকুরি করতে চেয়েছি। সেই সাথে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ চেয়েছি। মা প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান ছিল বাবা-মা স্বপ্ন। এভাবেই এই চাকুরিতে আসা।’
ইউএনও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীন ও গৃহহীন অসহায় মানুষদের জন্য ঘর নির্মাণ করে হস্তান্তর কাজের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকতে পেরে অত্যন্ত ভাল লেগেছে। অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে প্রতিটি দিন বিশেষ দিন আর প্রতিটি কাজই বিশেষ কাজ হিসেবে করার চেষ্টা করি। সবাইকে নিয়ে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমকে গতিশীল, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে বেগবান করে আদর্শ উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান। বিশেষত ডেল্টা প্ল্যান ও এসডিজি বাস্তবায়ন, শিক্ষার মানোন্নয়ন, মাদক ও বাল্যবিয়ে নির্মুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণদের কল্যাণে কাজ করাসহ তৃণমূল মানুষের উন্নয়নে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
সারমিনা সাত্তার, নাটোর সদর
নাটোর সদরের ইউএনও সারমিনা সাত্তার বিসিএস ৩৪তম ব্যাচের কর্মকর্তা ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর যোগদান করেন।
সারমিনা সাত্তার রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম আব্দুস সাত্তার ও মাতা রোখসানা আরা। স্বামী প্রকৌশলী মো. আতিকুল ইসলাম, চেয়ারম্যান অব রেইনকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। তিনি চট্টগ্রাম ভেটোরিনারী এন্ড এনিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মাকোলজিতে স্নাতকোত্তর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ভেটেরিনারী মেডিসিন ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ঢাকা ও গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।
তিনি বলেন, বাবা স্বপ্ন দেখতেন মেয়ে একদিন অনেক বড় হবে। ২০০৫ এর ডিসেম্বরে বাবা মারা যাওয়ার পর ইউনিভার্সিটির গন্ডি পেরুনোর আগেই বিবাহিত জীবনের শুরু। স্কুল এবং কলেজে প্রথম স্থান অধিকার করার ধারাবাহিকতায় নিজ ডিপার্টমেন্টের ভর্তি পরীক্ষাতেও প্রথম স্থান অর্জন করার সৌভাগ্য হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের গন্ডি পেরুনোর পর স্বামীর অনুপ্রেরণায় ৩৪তম বিসিএস এর ফরম পূরণ করেন। মূলত তারই অনুপ্রেরণায় সংসার, সন্তান সামলিয়ে বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে স্থান পাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন জীবনের একটি বড় সফলতা। শুকরিয়া পরম করুনাময়ের কাছে।
তিনি আরও বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন সোনার বাংলাদেশ গড়ার। তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সোনার বাংলাদেশ গড়ার আত্মপ্রত্যয় নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে স্বপ্ন দেখি সততা, নিষ্ঠা, মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সেই স্বপ্নের একজন সারথী হওয়ার। জনসেবার জন্যই জনপ্রশাসন-এই মূলমন্ত্রকে হৃদয়ে ধারণ করে এগিয়ে যেতে চাই সামনের দিনগুলোতে।
রোজিনা আক্তার, নলডাঙ্গা
নলডাঙ্গার ইউএনও হিসেবে রোজিনা আক্তার ২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন বিসিএস ৩৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা।
রোজিনা আক্তার সাতক্ষীরায় ১৯৮৬ সালের ১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জি.এম. রুহুল আমিন ও মাতা মনজু আমিন। স্বামী আশরাফুল কবির (বাংলাদেশ সচিবালয়ের অর্থ বিভাগে কর্মরত)। তিনি খুলনার সরকারি ব্রজলাল (বিএল) কলেজ থেকে রসায়ন বিষয়ে এমএসসি এবং ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গভর্ন্যান্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
মায়ের অনুপ্রেরণায় নিজেকে স্বাবলম্বী, আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে এই পেশা বেছে নিয়েছেন। মা-বাবার উদার ছায়াতলে তাদের সমর্থনে জীবনকে গড়ে তোলার সুযোগ পাওয়ায় নারী হিসেবে তেমন কোন বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়নি। পছন্দ রান্না করা, বই পড়া, গান শোনা।
এর আগে তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর লালমনিরহাট ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার; সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর; এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পরিবেশ অধিদপ্তর, আগারগাঁও, ঢাকা; সিনিয়র সহকারী সচিব তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, আগারগাঁও, ঢাকায় কর্মরত ছিলেন।
তিনি বলেন, মানুষ হিসেবে নিজের একটি আলাদা পরিচয়ে অন্যের জন্য কিছু করতে সমর্থ হওয়া সবচেয়ে বড় সফলতা।     যেখানেই কাজ করেছি নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করার চেষ্টা করেছি।     সেবা প্রাপ্তির একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান নবীন নলডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের সকল সহকর্মীকে নিয়ে একটি আধুনিক, জনবান্ধব উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দানে সঙ্গী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
মাহমুদা খাতুন, সিংড়া
সিংড়ার ইউএনও মাহমুদা খাতুন বিসিএস ৩৪তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি যোগদান করেন।
মাহমুদা খাতুন চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৪ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো. মোফাজ্জল হক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী ও মা মনোয়ারা বেগম, গৃহিনী। স্বামী মোহাম্মদ আনোয়ার উল আলম, সহকারী অধ্যাপক, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পোস্ট ডক্টরাল ফেলো, কর্নেল ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব নিউট্রিশন এ্যান্ড ফুড সায়েন্স থেকে পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞানে এমএস এবং ইউএসএ-র ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা থেকে মাস্টার্স ইন পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন ডিগ্রি অর্জন করেন।
এর আগে তিনি নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে প্রথম যোগদান করেন। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটিতে (বিডা) সহকারী পরিচালক, শিক্ষা ছুটি শেষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বলেন, বাবার আগ্রহে এ পেশা বেছে নেন। নারী হিসেবে তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে তবে আনন্দের স্মৃতি এবং সফলতাই বেশি, যা তিক্ত অভিজ্ঞতা গুলোকে ভুলিয়ে দেয়। সকলকে নিয়ে একসঙ্গে প সরকারি সেবা সমূহ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর ব্রত নিয়ে জনবান্ধব জনপ্রশাসন গড়ে তোলাই একমাত্র লক্ষ্য।
মোসা. মারিয়াম খাতুন, বড়াইগ্রাম
বড়াইগ্রামের ইউএনও হিসেবে মোসা. মারিয়াম খাতুন ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর যোগদান করেন।
মোসা. মারিয়াম খাতুন সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের ধানগড়া গ্রামে (তারিখ ও সাল) জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মো. দেলদারাজ আলী সরকার ও মাতা আমেনা বেগম। স্বামী মো. জিয়াউর রহমান, এবি ব্যাংকে কর্মরত। তিনি ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
বাবা-মায়ের আগ্রহ ও অনুপ্রেরণায় এ পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। এর আগে তিনি টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পরিকল্পনা কমিশনে কর্মরত ছিলেন।
তিনি বলেন, কৃষি প্রধান বড়াইগ্রাম উপজেলার মানুষের জীবন-যাত্রার মানোন্নয়নে ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সকল তথ্য উন্মুক্ত। সকলের সুচিন্তিত মতামত, পরামর্শ ও সার্বিক দিকনিদের্শনা কাম্য।
শ্রাবণী রায়, গুরুদাসপুর
গুরুদাসপুরের ২০তম ইউএনও হিসেবে শ্রাবণী রায় ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন বিসিএস ৩৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা।
শ্রাবণী রায় ১৯৮৭ সালের ১ জুলাই পাবনায় বেড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সুনীল চন্দ্র রায় ও মা দূর্গা রানী রায়। স্বামী শচীন মৌলিক, সরকারি চাকুরিজীবি। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। বিসিএস দিয়ে পছন্দের ক্যাডারে এসেছেন।
তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে এসি (ল্যান্ড), শিশু একাডেমিতে সহকারী পরিচলক, সিরাজগঞ্জ  ডিসি অফিসে এলএও, বগুড়ার আদমদীঘিতে ইউএনও হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তিনি বলেন, নাটোর গুরুদাসপুর উপজেলায় ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পেরে গর্বিত ও সম্মানিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ এই গুরুদায়িত্ব অর্পণ করে দেশ,  দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পেরে। ব্যক্তি ও কর্মজীবনে মা, ছোট ভাই, একমাত্র পুত্র সন্তান সৌরদীপের সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ।


এছাড়া জেলা পর্যায়ে নাটোরের সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও দুই পৌরসভার মেয়র নারী। আদালতের বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, ম্যাজিস্ট্রেট পদমর্যাদার বিচারক, লিগ্যাল এইড অফিসার, সহকারী জজ, সিনিয়র সহকারী জজ নারী।
জেলার সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রোজি আরা বেগম। বর্তমানে দেশের ছয়টি পৌরসভার মেয়র পদে রয়েছেন নারীরা। তাঁদের মধ্যে দুইজন নারী হলেন নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি ও লালপুরের গোপালপুর পৌরসভার মেয়র রোখসানা মোর্ত্তোজা লিলি।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন মাহমুদা শারমিন নেলী। তিনি জেলার প্রথম নারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। তিনি বর্তমানে সদর সার্কেলের দায়িত্বে রয়েছেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত আছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. রওনক জাহান, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শামিমা আক্তার জাহান, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (রাজস্ব শাখা এবং আর.এম শাখা) শাম্মী আক্তার তমা, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষা শাখা এবং জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন শাখা) জোবায়দা সুলতানা ও সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (জেএম শাখা) সাদিয়া আকতার।
লালপুরে ইউএনও ছাড়াও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আলেয়া ফেরদৌসী, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছা. শাহিনা সুলতানা, আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মোছা. আরজু খাতুন, তথ্য সেবা কর্মকর্তা সুকরানা আফসারী দায়িত্ব পালন করছেন।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top