logo
news image

ফারমার্স ব্যাংকের সব পরিচালকের পদত্যাগ

সমস্যাকবলিত ফারমার্স ব্যাংক থেকে সব উদ্যোক্তা পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। গত কয়েক দিনে তারা পর্যায়ক্রমে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। ব্যাংকটির পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে তারা পদত্যাগ করেছেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে। তবে একজন উদ্যোক্তা পরিচালক অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপে তারা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।

জানা গেছে, ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে নতুন প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংক গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। আবার নতুন করে কেউ আমানত রাখছেন না এ ব্যাংকে। উপরন্তু বিদ্যমান আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে চাইছেন। ব্যক্তিপর্যায় থেকে শুরু করে সরকারি- বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানই বাদ নেই আমানত উত্তোলনের তালিকা থেকে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে ইতোমধ্যে আমানতের টাকা উত্তোলনে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। এ পরিস্থিতিতে চরম বিপর্যয়ে নতুন প্রজন্মের ব্যাংকটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচনের বছর হওয়ায় সরকার ব্যাংক বন্ধ করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে না। এ কারণে ব্যাংকটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক অর্থাৎ সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জনগণের অর্থে ব্যাংকটি পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক প্রতিটি ১৬৫ টাকা করে মোট ৬৬০ কোটি টাকা এবং আইসিবি ৫৫ কোটি টাকাসহ সর্বমোট ৭১৫ কোটি টাকার মূলধনের যোগান দেবে ফারমার্স ব্যাংকে। বর্তমানে ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন রয়েছে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। বাকি অর্থের একটি অংশ অর্থাৎ পাঁচ সরকারি প্রতিষ্ঠান যোগান দেবে ৭১৫ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকটিতে মূলধনের প্রায় ৬৪ শতাংশ থাকবে সরকারি পাঁচ প্রতিষ্ঠানের দখলে। ফলে এ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের এমডিরা পদাধিকার বলে ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে থাকবেন। বর্তমানে দুইটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক মিউচুয়্যাল ফান্ড ও বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকার্ম মিউচুয়্যাল ফান্ড। এ দ্ইু প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে রেইস নামক এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির চারজন প্রতিনিধি রয়েছে। সব মিলে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন ৯ পরিচালক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ফারমার্স ব্যাংকের পর্ষদে ১২ উদ্যোক্তা পরিচালক ছিলেন। এর মধ্যে রেইসের চারজন বাদে বাকি আটজন ব্যক্তিপর্যায়ের উদ্যোক্তা পরিচালক পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তারা স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে পদত্যাগ করেছেন বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক উদ্যোক্তা পরিচালক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, তারা স্বেচ্ছায় নয়, তাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। ওই পরিচালক আক্ষেপ করে জানিয়েছেন, ব্যাংক কেলেঙ্কারির সাথে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি না দিয়ে গড় হারে সব পরিচালকের ওপর এর দায়ভার চাপানো হচ্ছে। অথচ ফারমার্স ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে এ পর্যন্ত যেসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে তার সবগুলোর সাথে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যানসহ হাতেগোনা দুই-তিনজন পরিচালকের নাম উঠে আসছে। দুদক থেকেও এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তারা বলেন, পর্ষদে সরকারি ব্যাংকের পরিচালক থাকলে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের মতো অবস্থা হয় কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই সরকারি পাঁচ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডিরা ফারমার্স ব্যাংকের শেয়ার কেনার জন্য ইচ্ছাপত্র (ইওআই) পর্ষদে জমা দিয়েছেন। এটি অনুমোদন হলে প্রতিষ্ঠানগুলো মূলধন যোগান দিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে মনোনীত হবেন তারা।


সূত্রঃ নয়াদিগন্ত

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top