logo
news image

৪৯তম আন্তর্জাতিক ফিজিকস অলিম্পিয়াড-বাংলাদেশের চার পদক

ইরতিজা ইরাম।  ।  
পাঠ্যবইয়ে পদার্থবিজ্ঞান পড়ে যতটা আনন্দ পাওয়া যায়, হাতে-কলমে ব্যবহারিক কাজের মাধ্যমে বিষয়টা শেখার আনন্দ তার চেয়ে বেশি। তবে আন্তর্জাতিক ফিজিকস অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের আনন্দ এই সব আনন্দকে ছাপিয়ে যায়। এ বছর ৪৯তম আন্তর্জাতিক ফিজিকস অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হলো পর্তুগালে। বাংলাদেশ থেকে সেখানে অংশ নিয়েছিলাম আমরা পাঁচজন। নটর ডেম কলেজ থেকে আমি ও তাহমিদ মোসাদ্দেক, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাশেদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম কলেজের আবরার আল শাদিদ ও বরিশাল জিলা স্কুলের ইমতিয়াজ তানভীর রহিম। আমাদের দলের সঙ্গে কোচ হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক এম আরশাদ মোমেন এবং বাংলাদেশ ফিজিকস অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর মাসুদ।
পর্তুগালে নেমেই দেখা হয় আমাদের গাইড সাহেদ ইব্রাহিমের সঙ্গে। বিদেশি প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের মানুষকে গাইড হিসেবে পেয়ে খুব ভালো লেগেছে। সারাক্ষণই তো বাংলাদেশের গল্প করলাম আমরা। একদিকে ভ্রমণক্লান্তি তখনো কাটেনি। তার ওপর পরীক্ষা নিয়েও খানিকটা দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। ক্লান্তি আর দুশ্চিন্তা ভুলে অংশ নিই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। ৮৭টি দেশের ৪৪৭ জন শিক্ষার্থী এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। আমরা স্পেন, রোমানিয়াসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গল্প জমানোর সুযোগ পাই। যতজনের সঙ্গে কথা হলো, সবাই কম-বেশি বাংলাদেশকে চেনে। কেউ কেউ আমাদের লাল-সবুজ পতাকা দেখে কৌতূহলী হয়ে নানা প্রশ্ন করে। আমরাও খুব আগ্রহ নিয়ে উত্তর দিই।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরদিন শুরু হয় মূল প্রতিযোগিতা। পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে ৪০ নম্বর শুধু ল্যাব পরীক্ষা ছিল। তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক-পরীক্ষা দুটি অংশে বিভক্ত। ৫ ঘণ্টা করে দুই দিনে ১০ ঘণ্টা পরীক্ষা দিতে হয়। ব্যবহারিক পরীক্ষার সুযোগ আমাদের কম বলে এই অংশ নিয়ে একটু ভয় ছিল। অজানা ভয়কে কাটানোর জন্য আমরা পুরো সময়ই নিজের মধ্যে পদার্থবিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে গল্প-আড্ডায় মেতে ছিলাম। দিনে পরীক্ষা আর বিকেলে ঘোরাঘুরির সুযোগ পেয়েছিলাম আমরা। পর্তুগালের বিভিন্ন জাদুঘর আর দুর্গে ঘোরার সুযোগ হয়েছে। আমাদের জন্য বিভিন্ন সম্মেলনও আয়োজন করা হয়েছিল। নাসার নভোচারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী ও পদার্থবিদদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই আমরা।
গত ২৮ জুলাই সমাপনী দিনে জানা যায় ফলাফল, এবারের আন্তর্জাতিক ফিজিকস অলিম্পিয়াডে চারটি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করি আমরা—আমি, আবরার, তাহমিদ ও রাশেদুল। আমাদের দলের দুজন সদস্য তিন পয়েন্টের জন্য সিলভার পদক এবং অন্য একজন দুই পয়েন্টের জন্য অনারেবল মেনশন মিস করেছে। একটা সমস্যায় ‘পারফেক্ট স্কোর’ করেছি আমি। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ফিজিকস অলিম্পিয়াড একটু কঠিন, তারপরও আমাদের দলীয় সাফল্যে আমরা খুশি।
এ বছর বাংলাদেশ যত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছে, সবখানেই চমক সৃষ্টি করেছে। সেই দলে আমরাও আছি বলে ভীষণ আনন্দিত। বাংলাদেশের জন্য বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা যতটা গর্বের, ততটাই আনন্দের। ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ ফিজিকস অলিম্পিয়াড কমিটি বাংলাদেশে ফিজিকস অলিম্পিয়াডের আয়োজন করে আসছে। গত বছর থেকে এই আয়োজনের সঙ্গে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও ব্যবস্থাপনায় প্রথম আলো যুক্ত হয়েছে। আমরা ভবিষ্যতে নিজেদের ছাপিয়ে যাব, এই প্রত্যয় নিয়েই পর্তুগাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে বিমানে চড়েছিলাম। আশা আছে, আগামীবার ফলাফল আরও ভালো হবে।
* ইরতিজা ইরাম:।পদকজয়ীদের একজন ও নটর ডেম কলেজের ছাত্র

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top