নবেসুমির সম্প্রতি দেওয়া নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
উত্তরবঙ্গের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান নাটোরের লালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস লিমিটেডে সম্প্রতি বিভিন্ন পদে এক’শ ১১ জনকে নিয়োগ দেন মিলের ব্যবস্থাপানা পরিচালক আব্দুল কাদের। নিয়োগ প্রদানের প্রক্রিয়ার সময় থেকেই নিয়োগ বাণিজ্য, মিলের লোকসান, তদবিরকারীদের মধ্যে চাকরী সংখ্যা ভাগাভাগি নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চিফ অব পার্সোনেল মো. রফিকুল ইসলামের স্বাক্ষরিত চিঠিতে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অনিয়মিতভাবে নিয়োগদানকৃত সকল শ্রমিক/কর্মচারীর নিয়োগ বাতিল করে ৪ কর্মদিবসের মধ্যে জবাব প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, মিলে অন্তত সাড়ে ৯’শ শ্রমিক চিনি উৎপাদনের সাথে জড়িত। আর এসব শ্রমিকরা দিন ২৬০ টাকা থেকে ৫৩৬ টাকা হাজিরা ভিত্তিতে কাজ করেন। কিন্তু মিলটি আর্থিক সংকটে থাকায় গত তিন মাস ধরে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মিলের ১৭ হাজার আখচাষীদের দুই মাসের আখ বিক্রির টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। যার কারণে পরিবার-পরিজনদের নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষীরা। অথচ সম্প্রতি নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে শতাধিক শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। অর্থের বিনিময়ে যার বেশির ভাগ নিয়োগ দেন মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কাদের। এই নিয়োগ দিতে গিয়ে তিনি দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বাণিজ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এই নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জিএম (প্রশাসন) আনোয়ার হোসেন, জিএম (অর্থ) সাইফুল ইসলাম, জিএম (কৃষি) মাজহারুল ইসলাম, জিএম (ফ্যাক্টরি) সরফরাজসহ অনেকের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মরত একাধিক শ্রমিক জানান, আর্থিক সংকটের কারণে মিল শ্রমিকদের ঠিকমত বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারে না। গত তিন মাসের বেতন ভাতা মিল পরিশোধ করতে না পারার কারণে আমরা মানবেতর-জীবন যাপন করছি। কিন্তু তারপরও লোকসানি প্রতিষ্ঠানে প্রায় শ খানেক নতুন কর্মচারী ও শ্রমিক নিয়োগের কোন প্রয়োজন ছিল না।
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কাদের করপোরেশনের ওই চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করলেও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, দেশের চিনিকলগুলো লোকসানের মুখে থাকার কারণে ২০১৫ সালে করপোরেশন সিদ্ধান্ত দেয় ২০০২ এর বিধি মোতাবেক শ্রমিক/কর্মচারী নিয়োগ না দিয়ে বর্তমান শ্রমিকদের নিয়ে মিলের কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য। ৪ বছর পর ২০১৯ সালে করপোরেশন সিদ্ধান্ত দেয় প্রয়োজন সাপেক্ষে শ্রমিক/কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া যাবে। সে হিসেবে মিলে ২৭০ টি পদ সৃষ্টি হয়, যেহেতু আমাদের মিলটা লোকসানি এজন্য গুরুত্বপূর্ণ পদ বিবেচনায় নিয়ে ১১১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সত্যি বলতে তাদের নিয়োগ না দিয়ে মিলের স্বার্থে তাদের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদানের পাশাপাশি মজুরি ৫৩৬ টাকার স্থলে ২৬০ টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এছাড়া ওভার টাইম কাজের ক্ষেত্রে মিলের প্রয়োজন পড়তো ২৭ লাখ টাকা আর নতুন অস্থায়ী নিয়োগদের মজুরি দিতে আমাদের প্রয়োজন পড়ছে মাত্র ৮ লাখ টাকা। মিলের লোকসান কমানোর পাশাপাশি মিলের প্রয়োজনার্থে ও করপোরেশনের সিদ্ধান্ত মেনেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য