logo
news image

ছবির ইশকুল

ফাহমিদা আলম।  ।  
ছিমছাম দোতলা বাড়ি। ভেতরে ঢুকতেই নজর কাড়ে একের পর এক ফ্রেমে বাঁধা ছবি। আরেকটু এগোলে চোখে পড়ে বড় একটা সাইকেল। দেখে সাঁই সাঁই করে চালানোর ইচ্ছে হওয়ার কথা, কিন্তু তা না করে আপনার সম্ভবত মনে হবে, একটা ছবি তুললে কেমন হয়? মনে না হয়েও উপায় নেই, সাইকেলটা যে দিব্যি দোতলার করিডর থেকে ঝুলছে! সবুজ গাছ-গাছালিতে ঘেরা বাড়িটা একবার চক্কর দিলেই মন উসখুস করবে ছবি তোলার জন্য। বাড়ির পরিবেশটাই যেন আপনার ভেতরের ‘আলোকচিত্রী’ সত্ত্বাটিকে বের করে আনবে!
‘কাউন্টার ফটো—আ সেন্টার ফর ভিজ্যুয়াল আর্টস’ নামের প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসের বর্ণনাই দিচ্ছিলাম এতক্ষণ। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গেলে ‘আছে ক্লাসরুম, আছে চক, আছে টিচারের বকবক’ এমন গানের লাইন মাথায় ঘুরতে পারে, কিন্তু এখানে এলে তেমনটা হবে না। রাজধানীর মিরপুর, শেওড়াপাড়ায় অবস্থিত এই ইশকুলে শেখানো হয় ফটোগ্রাফি। ছবি তোলার প্রাথমিক বিদ্যা থেকে শুরু করে ‘পোস্ট গ্র্যাজুয়েট’ করার সুযোগও রয়েছে এখানে। আর এই পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রির সনদ মিলবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
ভাবনাটা এসেছিল আলোকচিত্রী সাইফুল হকের মাথায়। বছর দশেক আগে, সমাজ ব্যবস্থার নানা অসংগতি আলোকচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরতে একটি সাময়িকী প্রকাশ করতে শুরু করেন তিনি। সাময়িকীটির নাম ছিল কাউন্টার ফটো। ভাবনা ডালপালা মেলতে থাকে। একসময় আলোকচিত্রী এন্ড্রু বিরাজকে নিয়ে গড়ে তোলেন আলোকচিত্রের স্কুল-কাউন্টার ফটো। সময়টা ২০১২ সালের নভেম্বর।
তারপর একটু একটু করে এগিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। ছয় বছরে ৫০টি প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে আলোকচিত্রের কলাকৌশল শিখেছেন ১ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ জানাল, যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া, ইংল্যান্ড, ইতালি, ভারত ও শ্রীলঙ্কার শিক্ষার্থীরাও ভিড় করছেন এখানে। যেমন কলকাতা থেকে পড়তে এসেছেন শান্তনু দে। নিজের অভিজ্ঞতা বললেন এভাবে, ‘যে রকম আশা নিয়ে পড়তে এসেছিলাম, তার চেয়ে প্রাপ্তিটা অনেক বেশি। পেশা হিসেবেই নিতে চাই ফটোগ্রাফিকে, সে ব্যাপারে কোনো দ্বিধা নেই।’
এরই মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জিতে নিয়েছেন দেশি-বিদেশি নানা পুরস্কার। ভিনদেশি নামী আলোকচিত্রীরাও এখানে আছেন শিক্ষক হিসেবে।
মেধাবী ও সুবিধাবঞ্চিত নারী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে পূর্ণবৃত্তির সুবিধা। তা ছাড়া প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস ও ভারতের ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চলছে ‘স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম’। কোর্সগুলোতে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রথমে নিজের তোলা ছবির পোর্টফলিও পাঠাতে হয়। স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হয়। আর ‘প্রোফেশনাল ডিপ্লোমা’ করতে ন্যূনতম যোগ্যতা হলো উচ্চমাধ্যমিকের সনদ।
শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করতে সক্রিয় রয়েছে স্টুডেন্ট ফোরাম ‘কালো’। কালোর আয়োজনগুলোও অন্য রকম। যেমন গানের উৎসব ‘চিলেকোঠার গান’ কিংবা চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ‘চিলেকোঠার সিনেমা’র কথাই ধরা যাক। শিল্পী-সাহিত্যিকদের সঙ্গে গল্প-আড্ডা, গান শোনা বা সিনেমা দেখার ফাঁকে ফাঁকেই সেসব আয়োজনে চলে আলোকচিত্র নিয়ে আলোচনা।
কাউন্টার ফটো বিস্তৃত হতে চায় দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। সে কথা নিজেই জানালেন প্রতিষ্ঠাতা সাইফুল হক। তাঁর মতে, ‘ল্যাটিন আমেরিকার কয়েকটি দেশে আমাদের শাখা বিস্তৃত করতে চাই। বর্তমানে তিনটি দেশের সঙ্গে স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম রয়েছে, সেগুলো বাড়ানোরও ইচ্ছা আছে।’
ওয়েবসাইটে: www.counterfoto.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top